নয়াদিল্লি: লকডাউনের জেরে বেশ কিছুদিন ধরেই বন্ধ রোজগার। বাড়ি ফেরার জন্য শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনেও জায়গা পাচ্ছিলেন না। উপায় না দেখে সাইকেল রিকশা চালিয়ে গুরুগ্রাম থেকে বিহারের মুজফফরাবাদে পৌঁছলেন ১১ জন রিকশা চালক। ১,০৯০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে তাঁদের বাড়ি পৌঁছতে লেগেছে আট দিন।


ভরত কুমার নামে এক রিকশা চালক জানিয়েছেন, ‘লকডাউনের জন্য দু’মাস ধরে আমি রিকশা চালাতে পারছিলাম না। টাকা ফুরিয়ে আসছিল। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছিলাম না। বাড়িভাড়াও দিতে পারছিলাম না। বাড়িওলা টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। বাড়ি ফেরার জন্য শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের যাত্রী হিসেবে নাম নথিভুক্ত করি। কিন্তু ট্রেনে জায়গা পাইনি। আর অপেক্ষা করতে না পেরে একদিন গুরুগ্রাম স্টেশনে যাই। কিন্তু আমাকে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আরও অনেকে ট্রেনের খোঁজ নেওয়ার জন্য স্টেশনে গিয়েছিলাম। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ১১ জন মিলে রিকশা চালিয়ে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিই।’

ভরত আরও জানিয়েছেন, ‘আমি দু’মাস অপেক্ষা করেছি। আর কতদিন ট্রেনের আশায় বসে থাকতাম? পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, সেটা ছেড়ে না দিলে বাড়িওলা বের করে দিতেন। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সেটা বুঝতে পারছি না। বাড়িতে থেকে কত টাকা উপার্জন করতে পারব জানি না। কিন্তু অন্তত এটা বলতে পারি, বাড়ি থেকে কেউ বের করে দেবে না। আয়ের কোনও একটা উপায় খুঁজে নেব।’

ঝোখু নামে অপর এক রিকশা চালক জানিয়েছেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফিরতে পারব। পালা করে একজন রিকশা চালাবে আর একজন বসে থাকবে। তাহলে সবাই বিশ্রাম পাবে।  কিন্তু রিকশাই আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি। সেটা গুরুগ্রামে রেখে আসা সম্ভব ছিল না। তাই সবাই যে যার রিকশা নিয়েই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিই।’

দয়ানাথ নামে অপর এক রিকশা চালক জানিয়েছেন, ‘আমাদের গুরুগ্রাম থেকে বাড়ি ফিরতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছে। আমরা এখনও ট্রেনের টিকিটের বিষয়ে কিছু জানতে পারিনি। আমরা রিকশা নিয়ে বাড়ি না ফিরলে, এখনও গুরুগ্রামেই থেকে যেতে হত। কতদিন অন্যের ভরসায় থাকা যেত? কেউ আমাদের সাহায্য করেনি। তাই নিজেদেরই বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২.৯০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফেরানো হয়েছে। তাঁদের জন্য ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আরও অনেক পরিযায়ী শ্রমিক হেঁটে বা অন্য কোনও উপায়ে বাড়ি ফিরেছেন।