#তুমুল বিতর্কের পর অবশেষে লোকসভায় পাশ হল তিন তালাক বিল। এই বিলে তিন তালাক ঘোষণা করে ডিভোর্স দেওয়ার রীতিতে সাজা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। বিলে বিরোধীদের আনা একাধিক সংশোধনী খারিজ হয়ে গিয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, তিন তালাককে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। তিন তালাক দেওয়ার সাজা হবে দোষী স্বামীর তিন বছর পর্যন্ত কারাবাস। বিলের পক্ষে ৩০২টি, বিপক্ষে ৭৮টি ভোট পড়েছে।
বিরোধীরা অভিযোগ করে, সরকার বিলটি অস্ত্র করে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে নিশানা করছে। পাল্টা সরকার বলেছে, বিলের উদ্দেশ্য লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠিত করা। বিরোধীরা সেটিকে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠিয়ে নতুন করে খতিয়ে দেখার দাবি করে। সরকার সেই দাবি মানেনি।


নয়াদিল্লি: লোকসভায় আলোচনার জন্য উঠল তিন তালাক বিল। বৃহস্পতিবার সংসদের নিম্নকক্ষে বিলটি বিবেচনার জন্য পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি সওয়াল করেন, তাত্ক্ষনিক তিন তালাক দেওয়ার প্রথাকে সু্প্রিম কোর্ট ২০১৭-র আগস্টের রায়ে খারিজ করে দিলেও মুসলিম মহিলাদের ‘তালাক-ই-বিদ্দত’ এর মাধ্যমে ডিভোর্স দেওয়া বন্ধ হয়নি। সুতরাং লিঙ্গ সাম্যের জন্য তিন তালাক রোধে আইন করা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। ২০১৭-র জানুয়ারি থেকে মিডিয়ায় ৫৭৪টি তিন তালাক দেওয়ার ঘটনার খবর বেরিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। রবিশঙ্কর বলেন, রাজনীতির চোখ দিয়ে বিষয়টা দেখবেন না। এটা মানবিকতা, ন্যয়বিচারের প্রশ্ন। নারীর অধিকার, ক্ষমতায়নের বিষয়। আমরা আমাদের মুসলিম বোনদের পরিত্যাগ করতে পারি না।
তিন তালাক প্রথাকে বেআইনি গণ্য করতে চলতি বিতর্কিত বিলে তালাক ঘোষণা করা স্বামীর তিন বছরের কারাবাসের প্রস্তাব রয়েছে।
কেন্দ্রের বিগত সরকারের আনা একই ধরনের একটি বিল সংসদের ছাড়পত্র না পাওয়ায় এপর্যন্ত তিনটি অর্ডিন্যান্স জারি হয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনে জুনে একটি নতুন বিল পেশ করেছে নয়া সরকার।
প্রস্তাবিত আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা দূর করতে কেন্দ্রের সরকার তাতে বেশ কয়েকটি রক্ষাকবচের ব্যবস্থা থাকছে বলে সওয়াল করেন রবিশঙ্কর। যেমন, বিচার শুরুর আগে অভিযুক্তের জামিন পাওয়ার সুযোগ থাকবে। বিলে তিন তালাককে ‘জামিন-অযোগ্য’ অপরাধ বলা হলেও অভিযুক্ত জামিন চেয়ে বিচারের আগেই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যেতে পারবেন। প্রসঙ্গত, জামিন-অযোগ্য অপরাধের বেলায় থানায় পুলিশ জামিন দিতে পারে না। রবিশঙ্কর বলেন, বিলে এমন ধারা রাখা হয়েছে যাতে ম্যাজিস্ট্রেট ‘স্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর’ জামিন মঞ্জুর করতে পারবেন।
বিরোধীরা বিলটিকে বর্তমান চেহারায় সমর্থনে নারাজ। এতে মুসলিমদেরই ক্ষতি হবে বলে অভিমত তাদের। বিজেপি দলীয় সাংসদদের লোকসভায় হাজিরা বাধ্যতামূলক করে হুইপ জারি করেছে।
কংগ্রেস ও ইউপিএ—তে তার শরিকরা যদিও বিলের বিরোধিতায় অনড়। লোকসভায় কংগ্রেসের চিফ হুইপ কে সুরেশ বলেন, পুলিশ ও সরকার অপরাধের ধারাটির অপব্যবহার করতে পারে। তাই আমরা ওই ধারার তীব্র বিরোধিতা করবে। সরকার অনড় থাকলে আমরা ভোটাভুটি চাইব।
বিলটি লোকসভায় সহজে উতরে যাবে সম্ভবত, কিন্তু রাজ্যসভায় সেটি পাশ হওয়ার পথে বাধা আসতে পারে। ইউপিএ ছাড়াও নবীন পট্টনায়কের বিজেডি, অন্ধ্রপ্রদেশের শাসক দল ওয়াই এস আর কংগ্রেস সেখানে বিলের বিরোধিতা করতে পারে। এমনকি বিজেপির শরিক নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ) পর্যন্ত বিলের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে।