নয়াদিল্লি: মোদি সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটে দেখা গেল নানান জনমুখী ঘোষণা। মধ্যবিত্তদের স্বস্তি দিয়ে আয়কর ছাড়ের সীমা দ্বিগুণ করার পাশাপাশি কৃষকদের জন্য বার্ষিক ৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রকল্পের ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পিযূষ গয়াল। মোদি সরকারের এই বাজেটকে স্বাভাবিকভাবেই কটাক্ষ করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, লোকসভায় অন্তর্বর্তী বাজেটের পরিবর্তে কার্যত পূর্ণাঙ্গ বাজেটে পেশ করেছে মোদি সরকার। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম খোঁচা দিয়ে বলেছেন, আসলে ভোটের কথা মাথায় রেখে এই বাজেট , ভোট অন অ্যাকাউন্ট নয়।
একইসঙ্গে ‘দেশের সম্পদের ওপর দরিদ্রদের প্রথম অধিকার’ সংক্রান্ত কংগ্রেসের ঘোষণা ‘নকল’ করার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানালেন চিদম্বরম। তিনি বলেছেন, বিজেপি সরকার আর্থিক ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড্গে কেন্দ্রীয় বাজেটকে নির্বাচনী ইস্তেহার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে ভোটারদের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেছে মোদি সরকার। সংসদের বাইরে খাড়্গে বলেছেন, বাজেটে যে প্রতিশ্রুতিগুলি বিজেপি দিয়েছে, সেগুলি ভোটের কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে এবং তা ‘জুমলা’ (ফাঁপা প্রতিশ্রুতি) ছাড়া আর কিছু নয়। ওই প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে না। কারণ, মোদি সরকারের মেয়াদ আগামী মে মাস পর্যন্ত।
চিদম্বরম সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, সাম্প্রতিক অতীতে এটা ছিল দীর্ঘতম অন্তর্বর্তী বাজেট বক্তৃতা। এভাবে ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
চিদম্বরম বলেছেন, এটা অন্তর্বর্তী বাজেট নয়। নির্বাচনী প্রচার সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আর তা করে সরকার দীর্ঘদিনের প্রথা লঙ্ঘন করেছে।
চিদম্বরম বলেছেন, ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী কোনও সরকার ওই প্রথার সম্মান করত। তিনি বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে, ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যাপারে সরকারের কোনও আশা নেই এবং সেজন্যই নির্দ্বিধায় ও বেপরোয়াভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বলেছেন, একটা বড় ব্যাপার হল যে, সরকার আর্থিক স্থিতিশীলতাকে আরও দুর্বল করেছে এবং এই নিয়ে পর পর দুই বছর আর্থিক ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে, খাড়্গে বলেছেন, তাদের শাসনকালে এনডিএ-র সাফল্য কী এবং গত পাঁচ বছরে কতগুলি প্রতিশ্রুতি পালন করেছে, সে বিষয়ে বিজেপি কিছু বলছে না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার মতো ‘জুমলা’ নিয়েও কোনও কথা বলেনি বিজেপি। তেমনি পাঁচ বছরে দশ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেও পারেনি।
এদিনের বাজেট বিজেপির অতীতের ‘জুমলা’র মতো প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি বলেও অভিযোগ করেছেন খাড়্গে।
কংগ্রেস নেতা আরও বলেছেন, বিজেপি যা কিছু করে তাতে রাজনীতি থাকে। এই বাজেটে গরিবদের জন্য কিছুই নেই। এই বাজেট নির্বাচনী ইস্তেহার মাত্র এবং বিজেপি তা সংসদে পড়েছে এবং তা ভোট পাওয়ার জন্য।


খাড়্গে বলেছেন, মানুষ সবই বোঝেন। তাঁদের এভাবে আর বোকা বানানো যাবে না।
বাজেটে ২.৫ হেক্টরের কম জমির মালিক কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। খাড়্গে বলেছেন, এর অর্থ প্রতি মাসে পাঁচশ টাকা।তাঁর অভিযোগ ‘ কৃষকদের খুশি করতে বিজেপি ভোটে টাকা বিলোচ্ছে বিজেপি। কিন্তু বাস্তবে প্রথম তিন মাসে কৃষকরা প্রথম কিস্তিতে মাত্র ২০০০ টাকা করে পাবেন’।
আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা পাঁচ লক্ষ টাকা করার ঘোষণা সম্পর্কে খাড়্গে বলেছেন, সংসদে বিজেপি সাংসদরা ‘তামাশা’ করেছেন। সরকারের মেয়াদ মে মাস পর্যন্ত। এরপরও পুরো বছরের বাজেট পেশ করা হয়ছে এবং ভোটের কথা মাথায় রেখে দেশের মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
খাড়্গের প্রশ্ন, কারা এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। ওরা যদি ক্ষমতায় না ফেরে তাহলে কে ওই প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।