বুধবার সাংবাদিকদের রাহুল বলেন, তিনি ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি অবিলম্বে তাঁর জায়গায় কাউকে নিযুক্ত করুক। উত্তরাধিকারী বাছাই, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তিনি যুক্ত নন বলেও জানিয়েছেন সনিয়া-তনয়। বলেছেন, আমি আর কংগ্রেস সভাপতি নই। ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছি। ওয়ার্কিং কমিটি এখনই বৈঠকে বসে নতুন কংগ্রেস সভাপতি স্থির করুক।
ট্যুইট করেও রাহুল বলেছেন, যে কংগ্রেস দলের আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের সুন্দর দেশের প্রাণভোমরার কাজ করেছে, তার সভাপতি হওয়া আমার কাছে গৌরব, সম্মানের। দেশ ও আমার সংগঠনের প্রতি রইল গভীর কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা।
চার পৃষ্ঠার এক খোলা চিঠিতে কংগ্রেসকে আমূল বদলাতে হবে বলে মন্তব্য করে রাহুল লিখেছেন, বিজেপি মানুষের কণ্ঠস্বর দমন করছে, কংগ্রেসকে তা রক্ষা করতে হবে। চিঠিটি ট্যুইটে জুড়ে দিয়েছেন রাহুল। তাতে এও লিখেছেন, আমার জন্ম কংগ্রেসি পরিচয়েই। এই দল বরাবর আমার সঙ্গে রয়েছে, আমার জীবনের প্রাণরস, চিরকাল থাকবেও। কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে ২০১৯ এর নির্বাচনে পরাজয়ের দায় আমার। দলের ভবিষ্যত সমৃদ্ধির জন্য দায় নির্ধারণ করাটা অত্যন্ত জরুরি। এই কারণেই কংগ্রেস সভাপতি পদে আমি ইস্তফা দিয়েছি।
রাহুল পরবর্তী সভাপতি বাছাই প্রসঙ্গে লিখেছেন, আমার সহকর্মীদের অনেকেরই প্রস্তাব, আমিই পরের কংগ্রেস সভাপতি মনোনীত করি কাউকে। দলকে কারও নেতৃত্ব দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমার পক্ষে তাঁকে বাছাই করাটা ঠিক হবে না। আমার বিশ্বাস আছে যে, কে সাহস, ভালবাসা, আনুগত্যের মাধ্যমে আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারেন, সে ব্যাপারে দলই সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত নেবে। রাহুলের প্রস্তাব, ওয়ার্কিং কমিটিকেই পরবর্তী সভাপতি খোঁজার ভার দেওয়া হোক। কয়েকজনের একটি গোষ্ঠীকে নতুন সভাপতির সন্ধান শুরু করার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
কোনও কোনও সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি নিঃসঙ্গ বোধ করেছেন, আবার সেজন্য গর্বিত বোধ করেন বলেও জানিয়েছেন রাহুল। লিখেছেন, দলকে নতুন করে গড়ে তুলতে গেলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ভরাডুবির জন্য অনেককেই দায়ী করতে হবে। কিন্তু দলীয় সভাপতি হিসাবে আমার নিজের দায় স্বীকার না করে অন্যদের কাঠগড়ায় তোলা ন্যয়সঙ্গত হবে না।
রাহুল লিখেছেন, ক্ষমতাবানেরা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকেন, এই প্রবণতা রয়েছে ভারতে। ক্ষমতার বাসনা ত্যাগ না করে আমরা বিরোধীদের পরাস্ত করব না।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির দায় নিয়ে সভাপতি পদ ছেড়েছেন রাহুল। দলের নানা মহলের আবেদন সত্ত্বেও তিনি সিদ্ধান্ত বদলে নারাজ। তাঁকেই ওই পদে চেয়ে দরবার করেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু তাঁর মত বদলানোর যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে, কয়েকটি রাজ্যে দলের একাধিক নেতাও পদ ছেড়েছেন। গণ ইস্তফার হিড়িক পড়েছে। এঁদের সংখ্যাটা হবে প্রায় ২০০।
গতকালই কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা রাহুলের সঙ্গে দেখা করে মাত্র ৫২টি লোকসভা আসন পাওয়া দলের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বার্থে তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। পরদিনই সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়ে দিলেন রাহুল।