প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ফৌজদারি আইন প্রণয়নে সরকারের সাফল্যের কথা। নরেন্দ্র মোদি বলেন, তাঁর সরকার সর্দার বল্লভ ভাই পটেলের স্বপ্ন সফল করার পথে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা বলতে পারি এক জাতি, এক সংবিধান। জিএসটি প্রণয়ন করে সারা দেশে এক করব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার লক্ষ্য এক দেশ, একসঙ্গে নির্বাচন।'
প্রত্যাশিত ভাবেই মোদির ভাষণে উঠে আসে জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রসঙ্গ। নতুন সরকার ১০ সপ্তাহের মধ্যে সব ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখিয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। লালকেল্লার ভাষণে আর কী কী বিষয়ে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, চলুন চোখ রাখি।
- দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাই।
- দেশের মানুষকে রাখিবন্ধনের শুভেচ্ছা জানাই।
- দেশের অনেক জায়গাতেই অতিবর্ষণ হয়েছে, এর ফলে বহু মানুষের দুর্দশরা মধ্যে আছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আমি সমবেদনা জানাই।
- দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের প্রণাম জানাই।
- নতুন সরকারের এখনও ১০ সপ্তাহও হয়নি। এরমধ্যেই সব ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ যে আশায় আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন সেক্ষেত্রে আমরা একটুও দেরী করিনি। ১০ সপ্তাহের মধ্যেই ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি ঘটেছে।বিলুপ্ত হয়েছে ৩৫এ ধারা।
- তিন তালাকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
- এরমধ্যেই সংশোধিত ইউএপিএ বিল পাস হয়েছে।
- কৃষক- ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা হয়েছে।
- জলসঙ্কট সমস্যায় আলাদা জলশক্তি মন্ত্রক তৈরি হয়েছে।
- সব বাড়িতে পরিশুদ্ধ পানীয় জল প্রকল্প চাই। সে জন্য ‘জল-জীবন মিশন’ নিয়ে এগিয়ে যাবে সরকার। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ লক্ষ কোটি টাকা।
- ডাক্তারদের চাহিদা মেটাতে তৈরি হয়েছে নতুন আইন।
- আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা তৈরি করেছি আমরা। পাঁচ বছরেই দেশের মানুষের বিশ্বাস আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
- আমাদের মুসলিম মা-বোনদের তিন-তালাকের আতঙ্ক মুক্তি হয়েছে।
- পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশ আগেই এই নিয়ম বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশেই এনিয়ে নানারকম দ্বিধা ছিল। সতীদাহ প্রথা বাতিল হলে তিন-তালাকও বাতিল হওয়া দরকার। আমরা চাই মুসলিম মা-বোনেরাও উন্নয়নে সামিল হোন।
- অনুচ্ছেদ ৩৭০, ৩৫এরও বিলুপ্তি ঘটিয়েছি আমরা। আমরা সমস্যা এড়িয়ে যাই না। সত্তর বছরে এই সমস্যার সমাধান হয়নি। কিন্তু ১০ সপ্তাহে সংসদের দুই কক্ষে এর সমর্থন পাওয়া গেছে।
- গত ৭০ বছর ধরেই সব সরকার কিছু চেষ্টা করেছে।কিন্তু যথার্থ ফল পাওয়া যায়নি। তাই এই দায়িত্ব পালনে সব বাধা ঠেলে এগিয়েছি আমরা। সত্তর বছর ধরে এর ফলে সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয়েছে। এর ফলে নানা ধরনের দুর্নীতির জন্ম হয়েছে।
- দলিত মানুষরা, নিম্নবর্ণের মানুষরা সেখানে সুযোগ পেতেন না। সেখানকার মানুষরা নাগরিক অধিকার পেতেন না। জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ ভারতের প্রেরণা হয়ে উঠতে পারবে।
- সাধারণ মানুষের ভালোর জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সারা দেশের সব রাজনৈতিক দলই এর সমর্থক। কিন্তু নির্বাচনের কথায় মাথায় রেখে বিরোধিতা করা হচ্ছে। তাঁরা বলছেন ৩৭০ জরুরি।
- তাঁরা সুযোগ থাকলেও কেন একে পার্মানেন্ট করেননি। কেন ৩৭০ ধারাকে টেম্পোরারি করে রাখা হয়েছিল?
- এখন আমরা বলতে পারি এক জাতি, এক সংবিধান। বল্লভভাই পটেলের এক দেশের স্বপ্ন সফলের দিকে এগোচ্ছি আমরা। জিএসটি-র মাধ্যমে এক দেশ, এক করব্যবস্থা করা হয়েছে।
- এখন আমরা এক দেশ, একসঙ্গে নির্বাচন।
- এখনও ভারতের অর্ধেক মানুষ পানীয় জল পান না। বহু দূর থেকে মেয়েদের জল নিয়ে আসতে হয়। সব বাড়িতে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের প্রকল্প চাই। সেজন্য জল-জীবন মিশন নিয়ে আমরা এবারো এগিয়ে যাব। সাড়ে ৩ লক্ষ কোটি টাকা এজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
- কেন্দ্র-রাজ্য একসঙ্গে এই প্রকল্প কাজ করছে। জল দান থেকে জল সঞ্চয়, জল রক্ষা সবই এরমধ্যে থাকবে।
- আমাদের দেশের জনসংখ্যার বিস্ফোরণ সঙ্কট তৈরি করছে।যাঁরা সচেতন তাঁরা এবিষয়ে সতর্ক থাকেন। তাঁরা শিশুর জন্ম দেওয়ার আগে চিন্তা করেন। একটা ছোট অংশের মানুষ এতে সামিল। আমরা চাই এঁরা সারা দেশের মানুষের কাছে উদাহরণ হোক। শিশুর জন্ম দেওয়ার আগে তার ভরণ-পোষণ নিয়ে ভাবতে হবে। এরজন্য সমাজের জাগরণ দরকার।
- দুর্নীতি আমাদের দেশের আর একটি জটিল রোগ, আমরা এই রোগের চিকিৎসা করছি।
- তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আমরা মোকাবিলা করছি। সরকারে এসেই অনেক উচ্চপদাধিকারীকে সরিয়ে দিয়েছি। তাঁরা দেশের উন্নতিতে সঠিক ভূমিকা পালন করছিলেন না। সরকার কারুর ওপর জোর করবে না। কিন্তু সরকার পাশে থাকবে।
- আমরা বহু অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল করে দিয়েছি। গত ১০ সপ্তাহেও আমরা ৬০টি এরকম আইন বাতিল করেছি। এই আইন মানুষের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।মানুষকে সরকারি সুবিধা পেতে বাধা দেয়।
- একশ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে পরিকাঠামো উন্নয়নে।
- আগামী ৫ বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছবে ভারত।
- আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পের বহু সুযোগ রয়েছে । আমরা এই শিল্পকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, অর্থনীতিও জোরদার হবে।
- সরকার স্থিতিশীল হলে তার ওপর সবার আস্থা থাকে।
- ভারতে এখন বিনিয়োগে আগ্রহী বহু দেশ।
- ‘ ভারত সন্ত্রাসবাদের জোরাল মোকাবিলা করছে।সারা পৃথিবী থেকে সন্ত্রাসবাদ মুক্তিতে ভারতের ভূমিকা আছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশও সন্ত্রাসবাদের শিকার। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কাও সন্ত্রাসবাদ থাবা বসিয়েছে। যারা সন্ত্রাসবাদ প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদেরও মোকাবিলা করতে হবে।
- সেনার তিন বাহিনীকেই একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এর জন্য তিন বাহিনীর সমন্বয়ে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ গঠিত হবে। এর ফলে তিন বাহিনীর সঠিক দিশা মিলবে।
- প্লাস্টিক দূরীকরণে আমরা এবার পদক্ষেপ নেব। ২ অক্টোবর থেকে এই প্রকল্পের কাজ করব।সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বলে ঘোষণা করা হবে। দোকানদারদের কাছে অনুরোধ প্লাস্টিকের ব্যাগ দেবেন না। সবাই কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করুন।
- এতে আমাদের ছোট ছোট শিল্পও সাফল্যের মুখ দেখবে, সবাই নিজের এলাকায় যে জিনিস হয় সেটি ব্যবহার করুন।
- ২০২২-এর অন্তত ১৫ বার বেড়াতে যান। দেশের ভিতরে বেড়াতে যান। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেশ চিনবে।
- ‘কৃষকদের কাছে আমার আবেদন আর রাসায়নিক স্যার ব্যবহার নয়। চাষের কাজে রাসায়নিক সার ব্যবহার করবেন না।
- দেড় লক্ষ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গ্রামে তৈরি হবে।
লালকেল্লায় আজ হাজির ছিলেন অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, এস জয়শঙ্কর, স্মৃতি ইরানি, রবিশঙ্কর প্রসাদ সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।