কলকাতা : প্রত্যেক দেশেরই সংবিধানের নিজস্ব একটা দর্শন থাকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ ও নীতি, যেগুলির ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় সংবিধান। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সদ্য স্বাধীন ভারতীয়দের আশা আকাঙ্খা ও ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে রচিত হয়েছিল ভারতের সংবিধান। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের উদ্দেশ্য বর্ণিত রয়েছে।
ভারতের সংবিধান রচিত হয়েছিল ১৯৪৬-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে। সময় লেগেছিল ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন। দেশের ইতিহাসে খুবই সংকটজনক ছিল ওই পর্ব। হিংসা, দেশভাগ, সামাজিক ও লিঙ্গ বৈষম্য এবং আর্থিক অনগ্রসরতা সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। সামাজিক সংহতি বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।
মৌলিক রাজনৈতিক নীতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কাঠামো, প্রক্রিয়া ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয় সংবিধানে। সেই সঙ্গে মৌলিক অধিকার, নির্দেশমূলক নীতি সমূহ ও নাগরিকদের কর্তব্যসমূহের উল্লেখ করা হয়েছিল সংবিধানে।
সংবিধানের খসড়া রচনা করেছিল গণ পরিষদ। প্রাদেশিক আইনসভাগুলির নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিলেন গণ পরিষদের সদস্যরা। ৩৮৯ সদস্য বিশিষ্ট গণ পরিষদ স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়া রচনার ঐতিহাসিক কাজ সম্পূর্ণ করেছিল ১৬৫ দিনের এগারোটি অধিবেশনে। এরমধ্যে ১১৪ দিন খসড়া সংবিধানের খসড়া বিবেচনার জন্যই ব্য়য় হয়েছিল। ১৯৪৭-এর ২৯ অগাস্ট গণ পরিষদ ড. বি আর অম্বেডকরের নেতৃত্বে একটি খসড়া কমিটি গঠন করে।এই কমিটির ওপরই ন্যস্ত হয়েছিল স্বাধীন ভারতের সংবিধানের খসড়়া রচনার দায়িত্ব।
ভারতের সংবিধানে শুরু থেকেই সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, জাতি, ধর্ম, শিক্ষা-স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
ভারতের সংবিধান রচয়িতারা বিভিন্ন দেশের সংবিধান বিশদে পর্যালোচনা করেন এবং এই সব সংবিধান থেকে গুরুত্বপূর্ণ নানা উপাদান সংগ্রহ করেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান হল ভারতের সংবিধান। ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশের সংবিধানের উপাদান ভারতের সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। সংবিধান রচনার সময় তার সম্পূর্ণটাই ছিল হাতে লেখা ও ক্যালিগ্রাফড।
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি এই সংবিধান কার্যকর হয়।