নয়াদিল্লি: ভারত-চিন সীমান্তে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। মঙ্গলবার, শীর্ষ সেনাকর্তা ও আধিকারিকদের এদিন বৈঠক করেন ডোভাল। সন্ধেয় আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।


এর আগে, গতকালই সেনা অফিসারদের কাছ থেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, সেনা বাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।


গতকাল, দু তরফের সেনার মধ্যে ব্রিগেড কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক বসেছিল চুলসুলে। কিন্তু, সেখানে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি উভয় পক্ষই। ফলে, আজ ফের আরেক দফার বৈঠক হওয়ার কথা।


সেনার তরফে জানানো হয়েছে, শনি ও রবিবারের মাঝের রাতে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে ভারতীয় এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করে চিনা সেনা। সীমান্তে স্থিতবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করে তারা। চিনা সেনাদের প্রতিহত করে ভারতীয় সেনা! তাৎ‍পর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই প্রথম প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করল চিন! এর আগে কখনও এই এলাকায় চিনের সঙ্গে ভারতের সংঘাত হয়নি!


ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে পূর্ব লাদাখে সঙ্ঘাত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে যে ঐক্যমত্যে পৌঁছনো গিয়েছিল, ২৯-৩০ অগস্ট রাতে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তা লঙ্ঘন করেছে। স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে সেখানে প্ররোচনামূলক সামরিক পদক্ষেপ করে তারা। লাদাখের চুসসুলে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ অংশে ভূখণ্ডে প্রকৃত অবস্থা পরিবর্তের চিনের এই একতরফা পদক্ষেপ প্রতিহত করেছে ভারতীয় সেনা।


যদিও, যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করেছে বেজিং। চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়, তাদের সেনা কখনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করেনি। চিন কখই অন্যের ভূমি দখল করেনি বা যুদ্ধের উস্কানি দেয়নি। হতে পারে, সীমান্তরেখা না থাকায় সেখানে কোনও বোঝার সমস্যা হয়েছে।


গত ১৫ জুন লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গালওয়ান উপত্যকায় চিনা বাহিনীর অতর্কিত হামলায় শহিদ হন ২০জন ভারতীয় বীর জওয়ান! খালি হাতে মোকাবিলায় চিনকে পাল্টা জবাব দেয় ভারতীয় সেনা! চিনের তরফেও একাধিক মৃত্যু হয়!


এই ঘটনার পর থেকে গোটা দেশ ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করে। এরপর নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে রাজনাথ সিং -- সকলেই লে গিয়েছেন। কিন্তু, তারপরও চিন তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করেনি। প্রতি নিয়ত চেষ্টা চালিয়ে গেছে অনুপ্রবেশের! দু’দেশের মধ্যে মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ে পাঁচ দফা বৈঠক হলেও, চিন কখনওই কথা রাখেনি!


সূত্রের দাবি, প্যাংগং হ্রদের ফিঙ্গার এইট এলাকার ঢাল থেকে ফিঙ্গার ফাইভ পর্যন্ত এখনও বসে রয়েছে চিনা বাহিনী। এই ফিঙ্গার এইট এলাকাকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে ধরে ভারত। যদিও চিন ফিঙ্গার ফোর এলাকাকেই এলএসি বলে গণ্য করে। তাদের বাধার মুখে পড়ে এপ্রিল থেকে সেখানে নজরদারি চালানো বন্ধ রয়েছে ভারতীয় জওয়ানদের।


এবারের সংঘাতের পর চুসুলে ভারত ও চিনের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। ভারতীয় সেনার তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পাশাপাশি আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারতীয় সেনা।