শ্রীহরিকোটা: আর মাত্র কয়েক ঘ্ণ্টার অপেক্ষা। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক বড় লাফ মারতে চলেছে ভারত। সোমবার ভোররাত ২টো ৫১ মিনিটে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান ‘চন্দ্রযান-২’। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন স্পেস সেন্টার থেকে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বৃহৎ জিএসএলভি-মার্ক থ্রি, পোশাকী নাম ‘বাহুবলী’ রকেটের পেটে চেপে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবে ‘চন্দ্রযান-২’। গন্তব্য, এখনও পর্যন্ত প্রায় অনাবিষ্কৃত চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতীর্ণ হয়ে খনিজ পদার্থ খোঁজা সহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে চন্দ্রযান-২।
‘চন্দ্রযান-২’-মহাকাশযানে মোট তিনটি উপাদান রয়েছে। যার মোট ওজন ৩,৮৫০ কিলোগ্রাম। এই তিন উপাদানগুলি হল -- একটি অর্বিটার, একটি ল্যান্ডার(বিক্রম) ও একটি রোভার (প্রজ্ঞান)।
১১ বছর আগে প্রথম চন্দ্রাভিযান ‘চন্দ্রযান-১’ সাফল্যের সঙ্গে করেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো। সেই সময় অবশ্য চাঁদের মাটি ছোঁয়েনি যানটি। শুধু তার চারপাশ প্রদক্ষিণ করেছিল। এবার দ্বিতীয় অভিযানের জন্য প্রহর গুণছে গোটা দেশ। ‘চন্দ্রযান-২’ তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৯৭৮ কোটি টাকা। আগামীকাল ভোররাতে জিএসএলভি-মার্ক থ্রি রকেটে ভর করে তা মহাকাশে পাড়ি দেব। ৫৪ দিনের যাত্রা। তারপর, ‘চন্দ্রযান-২’ অবতরণ করবে চাঁদের বুকে।





ইসরো সূত্রে খবর, ফুল ড্রেস রিহার্সালের পর রবিবার ভোর ৬টা ৫১ মিনিটে কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। তারপর জ্বালানি ভরা শুরু হয়। সেই কাজও সম্পন্ন। এখনও পর্যন্ত ইসরোর সবচেয়ে বহুল-প্রতিক্ষিত ও ব্যয়বহুল অভিযানের নাম ‘চন্দ্রযান-২’। একইসঙ্গে, তা অত্যন্ত জটিল ও আত্মসম্মান ও গর্বের বিষয়ও বটে। এই অভিযান সফল হলে, ভারত হবে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ যারা চাঁদের মাটি ছোঁবে।
সম্প্রতি, ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবন জানান, চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মোকাবিলা করে ‘সফট ল্যান্ডিং’ করাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। কারণ, এই সময় একাধিক ছোট ছোট কৌশল ব্যবহার করতে হয়। ফলত, ওই ১৫ মিনিট সবচেয়ে ‘আতঙ্কের’ হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, ‘চন্দ্রযান-২’ অভিযানে পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। চাপ কাটাতে শনিবার তিরুমালায় তিনি প্রার্থনা সারেন বলেও জানান।
জানা গিয়েছে, আনুমানিক ৬ সেপ্টেম্বর নাগাদ চাঁদের মাটি ছোঁবে ‘চন্দ্রযান-২’ এর ল্যান্ডার। ইসরো চাঁদের সেই জায়গা গবেষণার জন্য নির্বাচন করেছে, যা এর আগে কোনও দেশ করেনি-- চাঁদের দক্ষিণ মেরু। ইসরোর আশা, এই অভিযানের ফলে ভারত তথা বিশ্ব এবং সমগ্র মানব সভ্যতা ভীষণভাবে উপকৃত হবে।



কেন দক্ষিণ মেরু অঞ্চলকে বাছা হল? ইসরোর এক কর্তা জানান, দক্ষিণ মেরু হল চাঁদের এক আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ, এই অঞ্চলটি মূলত ছায়ায় থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চলে জলের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া সহজ। পাশাপাশি, এই অঞ্চলে যে জ্বালামুখ রয়েছে, তাতে সৌরমণ্ডলের প্রথম দিকের জীবাশ্মের অস্তিত্ব মিললেও মিলতে পারে।
‘চন্দ্রযান-২’ তে মোট ১৩টি পে-লোড থাকবে। এর মধ্যে আটটি অর্বিটার, তিনটি বিক্রম ও ২টি প্রজ্ঞানে থাকবে। পাঁচটি পে-লোড তৈরি করেছে ভারত। তিনটি ইউরোপ, দুটি মার্কিন ও একটি বুলগেরিয়ার। দেশের মহাকাশ গবেষণার প্রাণপুরুষ বিক্রম সারাভাইয়ের নামে ল্যান্ডারের নাম বিক্রিম রাখা হয়েছে।



ইসরো সূত্রে খবর, উৎক্ষেপণের পর ১৬ মিনিটের মাথায় মহাকাশযানটি ভূপৃষ্ট থেকে ৪০,৪০০ কিমি ওপরে পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়বে। পরের ১৭ দিন সেখানেই বিভিন্ন ধরনের মহড়া ও বৈজ্ঞানিকভাবে যানটিকে চালনার পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালাবেন বিজ্ঞানীরা। এই করতে করতে ‘চন্দ্রযান-২’ ভূপৃষ্ট থেকে ১.০৫ লক্ষ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করবে। সেখান থেকে যানটিকে লুনার ট্রান্সফার ট্র্যাজেক্টরিতে নিক্ষেপ করা হবে।
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, তার কয়েকদিন পর তা চাঁদের ১০০ কিমি x ১০০ কিমি গোলাকৃতি কক্ষপথের মধ্যে চলে আসবে। সেই সময় মূল যান থেকে ল্যান্ডার বিভক্ত হয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাবে। আরও কয়েকদিন পর তা চাঁদের মাটি ছোঁবে। জানা গিয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে দুটি জ্বালামুখীর মধ্যবর্তী একটি উঁচু অঞ্চলে বিক্রম অবতরণ করবে। সেটা হয়ে গেল, ল্যান্ডারের পেটে থাকা ২৭ কেজির রোভার বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্দিষ্ট স্থানে গবেষণার কাজ চালাবে।