নয়াদিল্লি: চোরাশিকার থেকে শুরু করে বার্ধক্য ও রোগ-- বিভিন্ন কারণে গত ৮ বছরে ভারতে ৭৫০-র বেশি বাঘের মৃত্যু হয়েছে ভারতে। তালিকার শীর্ষে মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র।


সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মোট ৭৫০-র মধ্যে ৩৬৯টি মারা গিয়েছে প্রাকৃতিক কারণে। চোরাশিকারীদের খপ্পরে প্রাণ হারিয়েছে ১৬৮টি বাঘ। এছাড়া, ৪২টি মারা গিয়েছে দুর্ঘটনা ও সংঘর্ষের মতো অজ্ঞাত কারণে এবং আরও ৭০টি মৃত্যুর সঠিক কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি, জাতীয় ব্যঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের (এনটিসিএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৯ -- এই সাত বছরে বিভিন্ন রাজ্যে ১০১টি বাঘ মারা গিয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।

কেন্দ্রীয় বণমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ডিসেম্বরে রাজ্যসভায় জানিয়েছিলেন, দেশের ব্যঘ্র সংখ্যা গত চার বছরে ৭৫০ বেড়ে ২,২৯৬ থেকে ২,৯৭৬ হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আমাদের পরিবেশগত ব্যবস্থার জন্য গর্ব হওয়া উচিত।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ৮ বছরে মধ্যপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এই রাজ্যে মারা গিয়েছে ১৭৩টি ডোরা-কাটা। এর মধ্যে ৩৮টির মৃত্যু হয়েছে চোরাশিকারের জন্য। ৯৪টির মৃত্যুর কারণ প্রাকৃতিক, ১৯টির কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ৬টি মৃত্যু অস্বাভাবিক এবং ১৬টি হৃদরোগে। প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশে ৫২৬টি বাঘ রয়েছে। যা দেশের যে কোনও রাজ্যের তুলনায় সর্বাধিক।

ব্যঘ্র মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে মহারাষ্ট্র। সম সময়ে এই রাজ্যে ১২৫টি বাঘ মারা গেছে। এরপর যথাক্রমে রয়েছে কর্ণাটক(১১১), উত্তরাখণ্ড (৮৮), তামিলনাড়ু(৫৪), অসম (৫৪), কেরল(৩৫), উত্তরপ্রদেশ (৩৫), রাজস্থান (১৭), বিহার(১১), পশ্চিমবঙ্গ(১১), ছত্তীসগড়(১০), ওড়িশা(৭), অন্ধ্রপ্রদেশ(৭), তেলঙ্গানা(৫), দিল্লি(২), নাগাল্যান্ড(২) এবং হরিয়ানা ও গুজরাতে একটি করে।

এর মধ্যে চোরাশিকারীদের হাতে মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে ২৮টি করে বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, অসম(১৭), উত্তরাখণ্ড (১৪), উত্তরপ্রদেশ(১২), তামিলনাড়ু(১১), কেরল(৬) এবং রাজস্থান(৩)।

চোরাশিকারীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এই মর্মে কোনও তথ্য মেলেনি জাতীয় ব্যঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের তরফে। একইভাবে, নিখোঁজ বাঘ সম্পর্কিত তথ্যও দিতে পারেনি এনটিসিএ।

এদিকে, এত বাঘের মৃত্যু নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সেবী সংগঠন। তাদের দাবি, চোরাশিকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। তাদের মতে, এটা গুরুতর বিষয়। এত সংখ্যক বাঘ চোরাশিকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে।

সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকার বেশি করে ব্যঘ্র-পর্যটনের ওপর জোর দিচ্ছে। যার জেরে ডোরা-কাটাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক বনাঞ্চল বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এখন সময় এসেছে বাঘেদের সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়ার।