নয়াদিল্লি: ভারতে আত্মহত্যার হার ক্রমেই বাড়ছে। দিনে গড়ে ৩৮১ জন করে আত্মঘাতী হন। আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। মোট আত্মহত্যার ৫০ শতাংশ ৫ রাজ্যে। এমনই জানাচ্ছে ২০১৯ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো(এনসিআরবি) পরিসংখ্যান।


সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে বছরে ভারতে আত্মহত্যা করেছিলেন ১,২৯,৮৮৭ জন। ২০১৮-য় তা বেড়ে দাঁড়ায়, ১,৩৪,৫১৬। ২০১৯ সালে সারা বছরে আত্মঘাতী হয়েছেন ১,৩৯,১২৩জন। অর্থাৎ বছরে আত্মঘাতী হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে চার হাজারের উপরে।


২০১৮-র থেকে ২০১৯-এ প্রতি এক লাখে আত্মহত্যার হার বেড়েছে ০.২ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে গোটা দেশের তুলনায়, শহরগুলিতে আত্মহত্যার হার বেশি। ভারতে আত্মঘাতী হওয়ার গড় হার ১০.৪ শতাংশ। কিন্তু শহরে আত্মহত্যার গড় হার ১৩.৯ শতাংশ।


গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যাই এ দেশে সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। ৫৩.৬ শতাংশ মানুষ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন ২৫.৮ শতাংশ মানুষ। জলে ডুবে নিজেকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেন ৫.২ শতাংশ মানুষ।


কী কারণে ভারতে এত মানুষ প্রতিদিন আত্মঘাতী হচ্ছেন? এনসিআরবি জানাচ্ছে, সবচেয়ে উপরে রয়েছে পারিবারিক অশান্তি। বৈবাহিক জীবনের অশান্তি ছাড়াও অন্যান্য কারণও রয়েছে যার মধ্যে।


পরিসংখ্যান বলছে, মোট আত্মহত্যার সিংহভাগই ( ৩২.৪ শতাংশ) পারিবারিক বিবাদ থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে শেষ করার পথ বেছে নেন। শুধুমাত্র বৈবাহিক জীবনের অশান্তি থেকে রেহাই পেতে আত্মঘাতী হন ৫.৫ শতাংশ মানুষ।


এছাড়া, রোগের যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি চেয়ে আত্মঘাতী হন ১৭.১ শতাংশ। এই সব কারণ মিলিয়ে ২০১৯ সালে ৫৫ শতাংশ মানুষ নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন।


প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭০.২ জন পুরুষ ও ২৯.৮ জন মহিলা আত্মহত্যা করেন। এর মধ্যে আবার বিবাহিত পুরুষের আত্মহত্যার হার বেশি। প্রায় ৬৮.৪ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। বিবাহিত মহিলার ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান ৬২.৫ শতাংশ।


গোটা দেশের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে(১৮,৯১৬)। তারপরেই রয়েছে তামিলনাড়ু(১৩,৪৯৩)। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ( ১২,৬৬৫)। এরপর রয়েছে মধ্যপ্রদেশ(১২,৪৫৭)। কর্নাটকের স্থান পঞ্চম (১১,২৮৮)। এই পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে আত্মহত্যার হার ৪৯.৫। বাকি ২৪ রাজ্য ও ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে আত্মহত্যার হার ৫০.৫।


সবেচেয়ে বেশি জনঘনত্বের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক ভাবে কম। মোট আত্মহত্যার মাত্র ৩.৯ শতাংশ উত্তরপ্রদেশের। পরিবারের সবাই মিলে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণের তামিলনাড়ুতে। তারপরেই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে কেরল।


২০১৯ সালে যত মানুষ আত্মহত্যা করেছেন তার ৩.৭ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট বা তার চেয়ে উচ্চ স্তরে পড়াশোনা করেছেন। আত্মহত্যার এই প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু। সময়সাপেক্ষ হলেও তা কমানো সম্ভব বলেও মত প্রকাশ করেছিল হু। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বলছে দেশে আত্মহত্যা ক্রমেই বাড়ছে।