সিডনি: অস্ট্রেলিয়ায় ইতিহাস গড়ল বিরাট কোহলি বাহিনী। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অজিদের হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতে নিল তারা। এই প্রথম কোনও এশীয় দল বিশ্ব ক্রিকেটে অপ্রতিরোধ্য অজিদের তাদেরই দেশের মাটিতে সিরিজ হারাতে সক্ষম হল।

বৃষ্টিবিঘ্নিত সিডনি টেস্টে পঞ্চম দিনও চূড়ান্ত বেকায়দায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশেষজ্ঞরা কার্যত নিশ্চিত ছিলেন, বল গড়ালে এই টেস্টও অজিরা হারবে। রুদ্ধশ্বাসে জয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যান। কিন্তু বৃষ্টির জেরে শেষদিন ম্যাচ শুরুই হতে পারেনি, টেস্ট ড্র হয়ে যায়। ফলে অ্যাডিলেড ও মেলবোর্ন টেস্ট জয়ের সুবাদে সিরিজ ২-১-এ জিতে নেয় টিম ইন্ডিয়া। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জেরে চেতেশ্বর পূজারা ম্যান অফ দ্য সিরিজ হয়েছেন। ম্যান অফ দ্য ম্যাচও তিনি।

লালা অমরনাথের দল স্বাধীনতার পর ১৯৪৭-৪৮-এ প্রথম অস্ট্রেলিয়া যায়। বিপরীতে ছিল ডন ব্র্যাডম্যানের অপ্রতিরোধ্য দল। ৭১ বছরের মাথায় এই প্রথম ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতল।

সিডনি টেস্টে প্রথম ইনিংসে ভারত খাড়া করে ৭ উইকেটে ৬২২ রানের পাহাড়। চেতেশ্বর পূজারা ১৯৩ রান করেন, ঋষভ পন্থ অপরাজিত ১৫৯। জবাবে মাত্র ৩০০ রানে অল আউট হয়ে যায় টিম পেনের দল, বাধ্য হয় ফলো অন করতে। ৯৯ রানে ৫ ইকেট তুলে নেন কুলদীপ যাদব। দেশের মাটিতে ১৭২ ম্যাচ পর এটাই অজিদের প্রথম ফলো অন। কিন্তু ৩-১-এ সিরিজ হারের লজ্জা থেকে অস্ট্রেলিয়াকে বাঁচাতে কার্যত দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে মাঠে নামে আবহাওয়া। রবিবার সারাদিন আকাশ মেঘলা ছিল, মাঝে মাঝেই নামে বৃষ্টি। ২৫.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া যখন বিনা উইকেটে ৬, তখন কম আলোর জেরে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। আর আজ স্থানীয় সময় সকাল দশটায়, ঠিক ম্যাচ শুরুর সময়েই খেলা হবে না বলে ঘোষণা করা হয়, টানা বৃষ্টির সৌজন্যে।

অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন, ভারতীয় দলের অংশ হিসেবে এত গর্ব তাঁর আগে কখনও হয়নি। পরিবর্তিত এই দল যে সংস্কৃতি তৈরি করেছে, যখন থেকে তিনি অধিনায়ক হয়েছেন, তার ৪ বছরের মাথায় এই অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জয়। এই দলকে নেতৃত্ব দিতে পেরে তিনি গর্বিত, এটা বিরাট সম্মান। দলের খেলোয়াড়রা অধিনায়কের মুখ রেখেছে। দেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার সুনীল গাওস্করও বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে এই মুহূর্ত ঐতিহাসিক, অসামান্য।



দ্বিতীয় টেস্ট বাদ দিলে অজি ব্যাটিংকে এই সিরিজে বিস্ময়করভাবে নড়বড়ে দেখিয়েছে। দুই সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার সাসপেন্ড থাকায় ব্যাট হাতে বিশেষ কিছুই করে উঠতে পারেনি তারা। উল্টোদিকে ভারতীয় দল ছিল অপ্রতিরোধ্য, তাদের তিন পেসার জশপ্রীত বুমরা, ঈশান্ত শর্মা ও মহম্মদ সামি অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের সেভাবেই নাকানিচোবানি খাইয়েছেন, যেভাবে লিলি, টমসনরা হাল খারাপ করে ছাড়তেন বিদেশি ব্যাটসম্যানদের। বুমরা পেয়েছেন ২১ উইকেট, আবার ব্যাট হাতে চেতেশ্বর পূজারা করেছেন ৫২১। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, ঋষভ পন্থ, রবীন্দ্র জাডেজা ও নবাগত মায়াঙ্ক আগরওয়ালরাও উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে, অধিনায়কের কথা তো বলাই বাহুল্য।। উল্টোদিকে গোটা সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান ৭৯, করেছেন ওপেনার মার্কাস হ্যারিস। ফলে ১৯৭১-এ অজিত ওয়াড়েকরের দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডে জয় এবং ১৯৮৬-তে কপিল দেব ও ২০০৭-এ রাহুল দ্রাবিড়ের দলের ইংল্যান্ডে সিরিজ জয়ের মত কোহলি বাহিনীর এই জয়ও সগৌরবে রেকর্ড বুকে ঢুকে গেল।

এর আগে ৩১ রানে অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্ট জেতে ভারত। আবার পার্থ টেস্টে ১৪৬ রানে জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় অজিরা। কিন্তু তৃতীয় মেলবোর্ন টেস্টে ১৩৭ রানে টিম ইন্ডিয়া তাদের গুঁড়িয়ে দেয়।