নয়াদিল্লি: পুলওয়ামার সন্ত্রাসে জয়েশ-ই-মহম্মদের যোগসাজশ সংক্রান্ত কোনও তথ্যপ্রমাণ পাকিস্তানকে দেবে না, বরং সন্ত্রাসবাদে পড়শী দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা গোষ্ঠী, লোকজনের যোগসাজশ, সেদেশের ভূমিকা তুলে ধরতে সেসব বন্ধু দেশগুলির হাতে তুলে দেবে ভারত। এ কথা জানালেন জনৈক পদস্থ সরকারি কর্তা।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গতকালই ভিডিও বার্তায় ভারতের কাছে পুলওয়ামার ঘটনার তথ্যপ্রমাণ চান, যার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, বলেন, ভারত তা দিলেই তিনি ব্যবস্থা নেবেন। ভারত তথ্যপ্রমাণ না দিয়েই পাকিস্তানকে দায়ী করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু ভারত সরকার অতীত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ইমরানের দাবি মেনে তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার বিন্দুমাত্র পক্ষপাতী নয়। সরকারের অভিমত, অতীতে ২৬/১১-র সন্ত্রাসবাদী হামলা, পঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আঘাতের ঘটনায় পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে বসা লোকজনের ভূমিকা সম্পর্কে একাধিক তথ্যপঞ্জি বা ডসিয়ার দেওয়া হলেও অপরাধীদের সাজা দিতে কিছুই করেনি ইসলামাবাদ। সরকারি কর্তাটি বলেন, পাকিস্তানকে কোনও প্রমাণ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং আমরা পুলওয়ামা ও ভারতের মাটিতে অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাকিস্তানে আশ্রয় পাওয়া লোকজনের ভূমিকা উদ্ঘাটনে সেসব মিত্র দেশগুলিকে দেব।
২০০৮ এর মুম্বই হামলার ব্যাপারে পাকিস্তানকে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হলেও ১১ বছর পরও লস্কর-ই-তৈবা প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সঈদ, গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা জাকিউর রহমান লকভি, কয়েকজন আইএসআই অফিসার ও অন্যদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ৫ সদস্যের পাকিস্তানি তদন্তকারী দলকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের জন্য হামলাস্থল ঘুরে দেখতে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে দেশে ফিরে দাবি করে, পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীরাই ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে হামলা করেছে, তার প্রমাণস্বরূপ তথ্য, নথি দিতে ব্যর্থ হয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
সরকারি অফিসারটি বলেন, এমন আচরণের পর পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলে কোনও লাভ নেই। এখন আমাদের প্রাথমিক কাজ হবে পাকিস্তানের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী উন্মোচন করা, সন্ত্রাসবাদে মদত, উসকানি দেওয়ায় তার ভূমিকা তুলে ধরা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মঙ্গলবারই ইমরানের তথ্যপ্রমাণ পেশের দাবির পাল্টা বলেন, জয়েশ-ই-মহম্মদ প্রকাশ্যেই পুলওয়ামার হামলার দায় স্বীকার করেছে। মুম্বই হামলায় জড়িত জঙ্গি গোষ্ঠী, তার হ্যান্ডলারদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের তরফে কোনও স্পষ্ট ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, এর কী পরিণতি, আমরা জানি।
বিদেশমন্ত্রকও গতকালই ইমরানের নাকচ করে বলে, সন্ত্রাসবাদী হামলায় যোগসাজশ অস্বীকার করা পাকিস্তানের বহুল পুনরাবৃত্তি করা অজুহাত মাত্র। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের প্রাণকেন্দ্র। পাকিস্তানের যে ট্র্যাক রেকর্ড, তাতে গ্যারান্টি দেওয়া ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি ফাঁপা আওয়াজের মতো শোনায়।