রুমা পাল, কলকাতা: আটকে রয়েছে চেক। থমকে গিয়েছে টাকা তোলা আর জমা দেওয়ার কাজ।  ক্যাশ নেই এটিএমে। দেশজোড়া ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন ভোগান্তির অভিযোগ নানা প্রান্ত থেকে। এর মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককর্মী সংগঠনগুলির হুঁশিয়ারি, কেন্দ্র বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত থেকে না সরলে, কৃষক আন্দোলনের ধাঁচে লাগাতার বিক্ষোভ চলবে। তারপরই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের আশ্বাস, সব ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ হচ্ছে না।


বাজেটে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তার বিরোধিতায় সোমবার থেকে দু’দিনের দেশজোড়া ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দেয় ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাঙ্ক ইউনিয়নস। সোমবারের পর মঙ্গলবারও বেসরকারিকরণের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কর্মী ও অফিসাররা। মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহান্তে ১৩ ও ১৪ মার্চ এমনিতেই বন্ধ ছিল ব্যাঙ্ক। এরই সঙ্গে সোম ও মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে গ্রাহকরা।


ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। বহু জায়গায় এটিএমে পাওয়া যায়নি টাকা। আন্দোলনকারী ব্যাঙ্ক কর্মীদের দাবি, শুধুমাত্র তাঁদের কর্মসুরক্ষার স্বার্থে এই ধর্মঘট নয়, সাধারণ মানুষের কষ্টের সঞ্চয়ের সুরক্ষাও এর সঙ্গে জড়িয়ে।


এসবিআই অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের বেঙ্গল সার্কলের সাধারণ সম্পাদক শুভজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কোনও রাস্তা তৈরি হওয়ার সময় মানুষ কয়েক দিনের জন্য সমস্যায় পড়ে। এক্ষেত্রেও তাই। এখন হয়তো কয়েক দিনের অসুবিধা হচ্ছে। কিন্ত বেসরকারিকরণ না আটকালে সব মানুষকেই ভুগতে হবে।’


এরই মধ্যে কেন্দ্রের বিমা সংস্থা বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুধবার ধর্মঘট ডেকেছে সাধারণ বিমা শিল্প ৷ বৃহস্পতিবার ধর্মঘটে নেমে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন জীবন বিমা নিগম বা এলআইসির কর্মী এবং অফিসারেরা ৷ বিমাক্ষেত্রে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে নিজেদের আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের ৯টি ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্মীদের ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে কৃষক আন্দোলন সংগঠন। এবার সেই কৃষক আন্দোলনের ধাঁচে লাগাতার বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত ব্যাঙ্ক কর্মীরা।


অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌম্য দত্ত বলেছেন, ‘আমরা তো দুদিনের ধর্মঘট করলাম। এরপরেও যদি সরকারের টনক না নড়ে তাহলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে যাবে। দরকারে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব আমরা। কৃষক আন্দোলনের ধাঁচে আন্দোলন হবে। লাগাতার ধর্মঘটের ভাবনা রয়েছে আমাদের৷’


ধর্মঘটী ব্যাঙ্ককর্মীদের দাবি ছিল, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে হবে। এদিন চাপের মুখে, সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।


ধর্মঘটী ব্যাঙ্ককর্মীদের সমর্থন জানিয়ে ট্যুইট করে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী বলেছেন, ‘লাভের অঙ্ক আত্মসাৎ আর লোকসানের রাষ্ট্রীয়করণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদির বন্ধুদের কাছে রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে বিক্রি করে দিয়ে দেশের আর্থিক সুরক্ষার সঙ্গে মারাত্মক ভাবে আপস করা হচ্ছে।’