নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনসিআর) ইস্যুতে দেশের নানা প্রান্তে হিংসা, অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার জানাল, ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে জন্ম তারিখ অথবা জন্মস্থান সংক্রান্ত নথি বা দুটোই। অর্থাত্ এই সংক্রান্ত নথিপত্র পেশ করেই কেউ প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি এদেশের নাগরিক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জনৈক মুখপাত্র শুক্রবার একথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুসারে নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ কী কী নথিপত্র গ্রাহ্য হবে, সেগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে। তাতে সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয়, এমন বেশ কিছু নথির উল্লেখ করা হবে, যাতে এটা সুনিশ্চিত করা যায় যে, কোনও ভারতীয় নাগরিককেই অযথা হয়রানি, হেনস্থার মুখে পড়তে, অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ১৩টি ঘনঘন তোলা হয়, এমন প্রশ্নের উল্লেখ করে বলেছে, আপনার জন্মের তারিখ, মাস, বছর ও স্থানের বিস্তারিত তথ্যই যথেষ্ট বলে গণ্য করা হবে। কিন্তু বাবা-মায়ের কোনও তথ্য, নথি পেশ করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। তবে যাঁদের কাছে নিজের জন্ম সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নেই, তাঁদের বাবা-মা সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে।






মুখপাত্রটি আরও জানিয়েছেন, ভারতের নাগরিকদের বাবা-মা ও দাদু-ঠাকুমার ১৯৭১ সালের আগের পরিচয়পত্র, জন্মের শংসাপত্রের মতো নথি দেখিয়ে এদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের প্রমাণ হাজির করতে হবে না। পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, যে নিরক্ষর নাগরিকদের কাছে কোনও নথিপত্রই নেই, তাঁদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে থেকে সাক্ষী হাজির করার অনুমতি দিতে পারে। একটি সুচারু ভাবে তৈরি পদ্ধতি-প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। নাগরিকত্বের প্রমাণ পেশ করতে বলে কোনও ভারতীয়কে হেনস্থার মুখে ফেলা হবে না।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিজেদের ঘোষিত অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে বাইরের দেশ থেকে আসা কোনও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে টার্গেট করা হচ্ছে না। তাতে আরও বলা হয়েছে, এই আইনে কিছু অভিবাসনকারীকে কিছু শর্ত মানার সাপেক্ষে ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে, যারা হয়তো ‘বেআইনি’ তকমা পেতেন।

সোস্যাল মিডিয়ায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে নানা ধরনের গুজব, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে, এই প্রেক্ষাপটেই এই বক্তব্য জানাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সিএএ, এনআরসির পক্ষে, বিপক্ষে দেশের নানা জায়গায় মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ চলছে। কোথাও কোথাও তা থেকে চরম অশান্তি ছড়িয়েছে।
সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ পাশ হওয়ার পরই বিক্ষোভ শুরু হয় দেশের নানা রাজ্য, শহরে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বিলে সই করলে সেটি আইনে পরিণত হয়। ওই আইনে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতন এড়াতে ভারতে পালিয়ে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি অর্থাত্ অ-মুসলিম উদ্বাস্তুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।