অঞ্জলি সিংহ, দিল্লি: ৪ থেকে ৭। ৭ থেকে ১২। ১২ থেকে ২২। তারপর ২৭। আর এখন ৩৪। দিল্লির হিংসায় ক্রমাগত বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। লাশের এই মিছিল যে আরও কত বড় হবে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। আহত শতাধিকের মধ্যে অনেকেই গুরুতর। শেষ পর্যন্ত তাঁদেরও প্রাণে বাঁচানো যাবে কিনা, তাও অজানা। উত্তর-পূর্ব দিল্লি এখন এককথায় জতুগৃহ। রাজধানীর রাজপথে পাপড়ির মতো ছড়িয়ে বোমা আর ইট, পাথর। বাতাসে বারুদের গন্ধ। গত ৭২ ঘণ্টায় ভজনপুরা, মৌজপুর, কারাওয়াল নগরে সিএএ বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ কার্যত কুরুক্ষেত্রের আকার নিয়েছে। যার ফলস্বরূপ, রক্তস্নাত হয়েছে রাজধানী। পরিস্থিতি এমনই যে গগন বিহার–জহরিপুরের মতো অঞ্চলে নর্দমা থেকে লাশ উদ্ধার করতে হচ্ছে পুলিশকে।
এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিতে আধা সেনা নামিয়েছে কেন্দ্র। মোতায়েন করা হয়েছে কাতারে কাতারে পুলিশ। জারি করা হয়েছে কার্ফু। এরপরও কোথাও কোথাও এখনও ধিক ধিক জ্বলছে হিংসার আগুন। আর সেই আগুনেই যখন দিল্লির একাংশ বিধ্বস্ত, তখন যেন মরুদ্যান হয়ে উঠেছে যমুনা বিহার। হাতে হাত রেখে হিংসা রুখে দিলেন হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।
যমুনা বিহারের ব্লক সি-১২ আবাসনেও একাধিকবার হামলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়েছে দাঙ্গাকারীরা। আবাসনের আবাসিকরাই সংঘর্ষকারিদের রুখে দিয়েছেন। শুধু নিজের পরিবারের চিন্তাই নয়, আশেপাশের আরও বসতির কথা মাথায় রেখে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাঁরা।
‘কিছুই কোথাও যদি নেই
তবু তো কজন আছি বাকি
আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।’
শঙ্খ ঘোষের কবিতার এই লাইনগুলোই যেন ওঁদের বাঁচার মন্ত্র।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে যমুনা বিহারের এক আবাসনের বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার জানালেন, “দাঙ্গাকারীরা এখানেও দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই কলোণীর সবাই মিলে ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। আবাসন থেকে দাঙ্গাকারীদের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। টানা ২ দিন এই লড়াই চলেছে। তারপর আস্তে আস্তে শান্তি ফিরে আসা। আর আমার মনে হয়, খুব শীঘ্রই হিংসা দূরে চলে যাবে এবং সৌভ্রাতৃত্বের জয় হবে।”
আব্দুল সাত্তারের প্রতিবেশী রোহিত অগরওয়ালও তাঁর অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে গিয়ে বলেন, “পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। বিগত ৩৫ বছর আমরা এখানে একসঙ্গে রয়েছি। জন্মের পর এই প্রথম দিল্লিতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখলাম। আমরা সকলে একাট্টা হয়ে থাকার কারণেই দাঙ্গাবাজদের তাড়াতে পেরেছি। আগামীতেও চাইব আমরা যেন এভাবেই একসঙ্গে থাকি।” আবাসনেরই এক মহিলাও জানান, হিন্দু হোক আর মুসলিম, সবাই মিলে রাত জেগে হাতে হাত রেখে মিলিতভাবেই দাঙ্গাকারিদের রুখে দিয়েছে। আর সেকারণেই বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পেরেছে এই আবাসন।