নয়াদিল্লি: তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেরই এক প্রাক্তন কর্মীকে যে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এই অভিযোগ অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আজ এই নজিরবিহীন মামলার শুনানি হয়, যে বেঞ্চে মামলাটি ওঠে গগৈই তার নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এই অভিযোগের পিছনে বড় মাপের ষড়যন্ত্র রয়েছে, তিনি এ সব খণ্ডন করেও নিজেকে ছোট করবেন না।


যে মহিলা এই অভিযোগ করেছেন, তিনি শীর্ষ আদালতে চাকরি করতেন। এফিডেভিটে দুটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন তিনি, অভিযোগ, সেগুলি ঘটেছে গত অক্টোবরে। তার অল্পদিন আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন গগৈ। অভিযোগকারিণীর বক্তব্য, প্রধান বিচারপতিকে বাধা দেওয়ায় তাঁকে চাকরি খোয়াতে হয়। তাঁর স্বামী ও দেওর হেড কনস্টেবলের পদে ছিলেন, ২০১২-র মিটে যাওয়া এক ফৌজদারি মামলা খুঁচিয়ে তুলে সাসপেন্ড করা হয় তাঁদের। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে তাঁর স্ত্রীর সামনে তাঁকে নতজানু হতে হয়, এমনকী নিজের নাক ঘষতে হয় তাঁর পায়ে।

মহিলার আরও অভিযোগ, একটি মামলায় পুলিশ স্টেশনে ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে শারীরিক ও মৌখিকভাবে নিগ্রহ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল সঞ্জীব সুধাকর কালগাঁওকর জানান, বেশ কয়েকজন বিচারপতি ওই মহিলার লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। যদিও যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন তিনি।

এরপরই তাড়াহুড়ো করে এ নিয়ে আজ শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে শুনানি। যে বেঞ্চে শুনানি হয়, তাতে প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি ছিলেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও সঞ্জীব খান্না। শুনানি চলে আধঘণ্টার মত। প্রধান বিচারপতি গগৈ বেঞ্চের নেতৃত্ব দিলেও আদালতের নির্দেশ পড়ে শোনান বিচারপতি খান্না। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কোনও রায় দিচ্ছে না আদালত, তবে সংবাদমাধ্যমের এই ইস্যুতে সংযম দেখানো উচিত, উচিত দায়িত্বশীল হওয়া। ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যে অভিযোগ বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও মর্যাদার মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

প্রধান বিচারপতি শুনানি চলাকালীন বলেন, বিচারক হিসেবে ২০ বছর নিঃস্বার্থ সেবার পর তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ। এতদিন কাজ করেও তাঁর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স মাত্র ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড রয়েছে ৪০ লাখের মত। তাঁর বক্তব্য, কোনও বৃহৎ শক্তি বিচারবিভাগকে ছোট করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাঁর মন্তব্য, দেশে প্রধান অফিস দুটি- প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও প্রধান বিচারপতির অফিস। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রধান বিচারপতির অফিসকে নিষ্ক্রিয় করতে চায়। এ দেশের বিচারবিভাগ বিরাট সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে, তবে ষড়যন্ত্রকারীদের কখনওই সফল হতে দেওয়া যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গত বছর ৩ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন রঞ্জন গগৈ। এ বছর ১৭ নভেম্বর তাঁর অবসর নেওয়ার কথা।