মথুরা: পাঁচ বছর আগেও যিনি একের পর এক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হতেন, যাঁর ঝুলিতে জুনিয়র ও সিনিয়র পর্যায় মিলিয়ে ৬০টি স্বর্ণপদক রয়েছে, সেই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন হরি ওম শুক্লকেই এখন আর্থিক অনটনে চায়ের দোকান চালাতে হচ্ছে। ২৮ বছর বয়সেই তিনি খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
হরি জানিয়েছেন, ‘এখন ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্বপ্নের মতো মনে হয়। পাঁচ বছরেই আমার জীবন বদলে গিয়েছে। আমি একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমার স্বপ্নপূরণের ক্ষেত্রে সাহায্য করছিল। কিন্তু পরে তারা আমাকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়। আমি স্কুলের বাচ্চাদের ক্যারাটে শেখানো শুরু করেছিলাম, কিন্তু লকডাউনের জেরে সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমার চায়ের দোকানে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’
উত্তরপ্রদেশের মথুরার বাসিন্দা হরি। তাঁর বাবার একটি চায়ের দোকান ছিল। সেই দোকানেই এখন বসছেন তিনি। এই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন বলছেন, ‘আমার দু’বছরের ছেলে আছে। পরিবারের অন্যান্য খরচও আছে। আমি কতদিন বাড়িতে বসে থেকে ভাল সময়ের অপেক্ষা করব? আমার কাছে এখন স্নাতকের ডিগ্রির কপি নেওয়ার মতো টাকাও নেই।’
হরি আরও জানিয়েছেন, তিনি মথুরার সাংসদ হেমা মালিনী, উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মার সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁকে সাহায্য করেননি। সরকারি চাকরি না পেয়ে চায়ের দোকান চালাতে বাধ্য হচ্ছেন এই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন।
২০০৬ সালে ১৩ বছর বয়স থেকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন হরি। জুনিয়র পর্যায়ে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০১৩ সালে তাইল্যান্ডে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তিনি সোনা ও রুপো জেতেন। ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কায় একটি সিনিয়র পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ৭৫ থেকে ৮০ কেজি বিভাগে সোনা ও রুপো জেতেন হরি।
এই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নের কোচ অমিত গুপ্ত বলছেন, ‘হরির পাশে দাঁড়ানো উচিত সরকারের। ওকে কোনও স্কুলে কোচ হিসেবে চাকরি দেওয়া যেতে পারে। তাহলে ও ভবিষ্যতে অ্যাথলিট তৈরির স্বপ্নপূরণ করতে পারবে। টোকিও অলিম্পিক্সে ক্যারাটেকে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির জন্য ভারতের কেউ টোকিওতে যেতে পারছে না। রাজনীতির জন্যই ভারতে ক্যারাটে শেষ হয়ে যাচ্ছে।’