নয়াদিল্লি: মমল্লাপুরমে নরেন্দ্র মোদি-শি জিনপিং দ্বিতীয় অঘোষিত শীর্ষবৈঠকে কাশ্মীর ইস্যুতে কোনও কথা হয়নি বা তা আলোচনায়ও ওঠেনি বলে জানালেন বিদেশসচিব বিজয় গোখেল। দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক শেষের পর বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, এই (কাশ্মীর) প্রসঙ্গ তোলা হয়নি, আলোচনাও হয়নি। আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার-এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। যদিও চিনা প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে কথাবার্তার মধ্যেই পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাম্প্রতিক বেজিং সফরের কথা জানান।
গোখেল সাংবাদিকদের বলেন, মোদি ও শি বলেছেন, মৌলবাদ তাঁদের দুজনের কাছেই উদ্বেগের বিষয়, উভয়েই একসঙ্গে চলবেন যাতে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ আমাদের বহু সংস্কৃতি, বহু জাতি, সম্প্রদায়, বহু ধর্মের সমাজের কাঠামোর ক্ষতি করতে না পারে।
এর আগে মোদি বলেন, এই সামিট দুটি দেশের মধ্যে এক ‘নতুন যুগে’র সূচনা করবে। তিনি ও শি মমল্লাপুরমের সমুদ্রতটে পদচারণা করেন, সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে মুখোমুখি কথাবার্তা বলেন দীর্ঘক্ষণ। তারপর সরকারি স্তরে আলাপ-আলোচনায় বসেন দুদেশের প্রতিনিধিরা। মোদি আরও বলেন, চেন্নাই-যোগ ভারত-চিন সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনা করল।


বিদেশ সচিব জানিয়েছেন, দুই রাষ্ট্রনেতাই ঠিক করেছেন, ‘তাঁরা নিজেদের মতপার্থক্য বিচক্ষণতার সঙ্গে মিটিয়ে ফেলবেন, তা বিতর্কে পর্যবসিত হতে দেবেন না’। মোদি বলেছেন, আমরা পরস্পরের উদ্বেগ, আবেগের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কথা হয়েছে যে, মতভেদ দেখা দিলে বিচক্ষণতার সঙ্গে সামলে নেব, তাকে বিতর্কে গড়াতে দেব না। গত বছর চিনের ইউহান সম্মেলনের পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ‘বাড়তি স্থিতিশীলতা’ ও ‘নতুন গতি’ এসেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মোদি বলেছেন, দুতরফের মধ্যে ‘কৌশলগত যোগাযোগ’ও বেড়েছে।

শি বলেন, এই সফর স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ‘হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়’ যোগ রেখে কথা হয়েছে তাঁদের। চিনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আপনি এবং আমি মন খুলে দুজন বন্ধুর মতো কথা বলেছি, হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের কথা হয়েছে। আপনার আতিথেয়তায় সত্যিই আমরা অভিভূত। আমি ও আমার সহযোগীরা সেটা দারুণ ভাবে অনুভব করেছি। আমার, আমাদের সবার কাছে এ এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে রইল। এ ধরনের শীর্ষবৈঠকের উদ্যোগ নেওয়ায় মোদির প্রশংসা করে শি বলেছেন, এটা দারুণ ভাবনা। মোদিকে তিনি বলেছেন, যা ঘটেছে, তাতে প্রমাণ হল যে, আমরা এমন অঘোষিত সম্মেলনে বসে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি এবং এ জাতীয় বৈঠক চালিয়ে যেতে পারি।

মোদি, শি আজ একান্তে কথা বলেন বঙ্গোপসাগর নিকটবর্তী বিলাসবহুল রিসর্ট ফিশারম্যানস কোভ-এ। চেন্নাইয়ের হোটেল থেকে মোটরমিছিল নিয়ে সেখানে পৌঁছলে শি-কে স্বাগত জানান মোদি। সেখান থেকে তাঁরা যান আলোচনাস্থলে। গোখেল জানান, নির্ধারিত সময়ের মেয়াদ ছাড়িয়ে সব মিলিয়ে দুজনে ৬ ঘন্টা কথা বলেন।
গত কয়েক সপ্তাহে চিন কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোয় নয়াদিল্লি-বেজিং সম্পর্কে টানাপড়েনের প্রেক্ষাপটেই মমল্লাপুরমে গতকাল রাত ও আজ বৈঠক হয় মোদি ও শি-র। চিনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের মুখে পাক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বৈঠকে কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন, তা নিয়ে চিনের মন্তব্যে চটেছে ভারত। তিনি কাশ্মীরের দিকে নজর রাখছেন, শি-র এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে ভারত।
বিদেশ সচিব জানান, চিনা প্রেসিডেন্ট পরবর্তী সামিটের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তিনি তা গ্রহণও করেছেন। দিনক্ষণ পরে স্থির হবে।