হায়দরাবাদ: রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ছিলেন কংগ্রেসের একজন সাধারণ কর্মী। সেই সময় তাঁর নামও কেউ জানত না। পরবর্তীকালে কংগ্রেস ছেড়ে তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) গঠন করেন কে চন্দ্রশেখর রাও। তাঁর দলের একমাত্র লক্ষ্য ছিল আলাদা রাজ্য গঠন। সেই দাবি আদায় করেই ছাড়েন টিআরএস প্রধান। ২০১৪ সালের জুনে নতুন রাজ্য গঠিত হওয়ার পর এই প্রথম সেখানে বিধানসভা নির্বাচন হল। সেই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল টিআরএস। কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলকেই পর্যুদস্ত করে কেসিআর বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা।


এ বছরের সেপ্টেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগেই বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন কেসিআর। বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ১১৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৫টি কেন্দ্রেরই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই মাস্টারস্ট্রোকেই বাজিমাত করতে পেরেছেন কেসিআর। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন হলে সারা দেশের ইস্যুগুলি তেলঙ্গানাতেও প্রভাব ফেলতে পারত। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন আগেই হওয়ায় সেরকম কিছু হয়নি। টিআরএস প্রার্থীরাও অন্য দলগুলির অনেক আগেই প্রচার শুরু করে দেন। এর ফল পাওয়া গিয়েছে। টিকিট না পেয়ে দলের যে নেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন, তাঁদেরও দমিয়ে রাখতে সফল হন কেসিআর।

১৯৮৩ সালে এন টি রামা রাওয়ের তেলুগু দেশম পার্টিতে যোগ দেন কেসিআর। সে বছরই প্রথমবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সিদ্দিপেট কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে অবশ্য সেই কেন্দ্র থেকেই জয়ী হন তিনি। এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা ১৩ বার লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন তিনি। চন্দ্রবাবু নাইডুর বিরুদ্ধে তেলঙ্গানার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগে ২০০১ সালে দল ছাড়েন কেসিআর। ২০০৪ সালে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেন। কিন্তু কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার অভিযোগে ইউপিএ ছেড়ে ২০০৯ সালে টিডিপি-র সঙ্গে জোট করেন কেসিআর। ২০০৯ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির মৃত্যুর পর পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন তীব্র করেন কেসিআর। তাঁর ১১ দিনের অনশন এবং বেশ কয়েকজনের আত্মহত্যার পর ২০০৯-এর ৯ ডিসেম্বর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের কথা ঘোষণা করেন। যদিও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল ও রায়লসীমার মানুষের প্রতিবাদের জেরে নতুন রাজ্য গঠনে জটিলতা তৈরি হয়। ফের আন্দোলন শুরু করেন কেসিআর। অবশেষে তাঁর লক্ষ্যপূরণ হয়। আজ এই নবগঠিত রাজ্যের উপর কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করলেন তিনি।