কলকাতা: কলকাতায় ১৪ অথবা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মেট্রো চলার সম্ভাবনা। মেট্রো চালানো হতে পারে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আজ বৃহস্পতিবার মেট্রো পরিষেবা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মেট্রোর কর্তাদের বৈঠক হয়।

সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই মেট্রোর তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়, একটি রেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ জন যাত্রী থাকলে করোনা দূরত্ববিধি বজায় রাখা সম্ভব। নবান্ন সূত্রে খবর, পরিষেবা চালু করতে রাজ্য সরকার যাবতীয় সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে মেট্রো কর্তাদের।

পাশাপাশি ক্রাউড ম্যানেজমেন্টে গুরুত্ব দেওয়ার কথা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নিট পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ১৩ তারিখে মেট্রো চালানোর আর্জি রাজ্যের। ভিড় এড়াতে বিশেষ অ্যাপেরও ভাবনা।

এ শহরের লাইফ-লাইন মেট্রো। লক্ষ লক্ষ মানুষের রোজনামচার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পরিষেবা। কিন্তু করোনা হানায় ২২ মার্চ থেকে থমকে আছে মেট্রোর চাকা! ৩৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার!

করোনা সংক্রমণের স্রোত রুখতে বন্ধ করা হয়েছিল ট্রেন-মেট্রো পরিষেবা। অবশেষে আনলক ৪-এ মেট্রো চালুর ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। তা নিয়েই এদিন নবান্নে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। নবান্ন সূত্রের খবর, ১৪ কিংবা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতায় মেট্রো পরিষেবা চালু করার ব্যাপারে সম্মত দু’পক্ষই। মেট্রো চলতে পারে সকাল ৮ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কোভিড গাইডলাইনে, ৭ সেপ্টেম্বর থেকে মেট্রো চালুর ছাড় দেওয়া হলেও, এই নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না মেট্রো এবং রাজ্য। তাই ফের মেট্রোয় যাতায়াতের জন্য মাঝ সেপ্টেম্বর অবধি অপেক্ষা করতেই হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, পরিষেবা চালু হলেও সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে? নবান্ন সূত্রের খবর, মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি রেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ জন যাত্রী থাকলে করোনা দূরত্ব বিধি বজায় রাখা সম্ভব। কিন্তু, অফিস টাইমে তা হবে কী করে? কলকাতা মেট্রো বন্ধ হয় গত ২২ মার্চ। তার আগে শেষ শুক্রবার অর্থাৎ ২০ মার্চ, মেট্রোর রেকর্ড অনুযায়ী, সারাদিনে ২ লক্ষ ১৯ হাজার স্মার্টকার্ড ব্যবহার করা হয়। সপ্তাহের অন্যান্য দিন সেই সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষে পৌঁছে যায়! সেই সংখ্যাটা ফিরলে কীভাবে সামাল দেওয়া যাবে? এক্ষেত্রেই রেক সংখ্যা ১০০ কিংবা তারও কম করা এবং রেক পিছু সাড়ে চারশো মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ভাবনা আছে মেট্রোর।

কিন্তু, দমদম থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত গোটা রেকে মাত্র ৪৫০ জনই থাকবেন - এটা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে? কারণ, মেট্রোর তথ্যই বলছে, নোয়াপাড়া থেকে নিউ গড়িয়া - এক একটি রেকে ৮টা কামরা থাকে। যাত্রীদের বসার আসন ৩৮৪। কোভিড পরিস্থিতিতে সেই সংখ্যা কমিয়ে ১২৮ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু লোক দাঁড়াতে পারবেন। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা সাড়ে চারশোয় বেঁধে রাখার চেষ্টা করছে মেট্রো। নবান্ন সূত্রের খবর, ক্রাউড ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের সহায়তা চেয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। রাজ্য সরকার তাতে সম্মতিও দিয়েছে। কলকাতা মেট্রোর প্রতিটি স্টেশনের জন্য একাধিক দরজা রয়েছে, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নজরদারিতে আরপিএফ বা মেট্রো পুলিশ নয়, রাজ্য পুলিশের সহায়তা লাগবে, তাই মেট্রো স্টেশনে একটি প্রবেশপথ ও একটি এক্সিট পয়েন্ট করার কথা হয়েছে। কলকাতা মেট্রোর সিপিআরও ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আলোচনা হয়েছে ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। ওটাই ছিল মূল ইস্যু।’

এখন যাঁদের স্মার্টকার্ড আছে, শুধু তাঁরাই মেট্রোতে উঠতে পারবেন! টোকেন দেওয়া হবে না! নতুন করে এখন স্মার্টকার্ডও দেওয়া হবে না। এই পরিস্থিতিতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এমন একটি অ্যাপ তৈরির কথা ভাবছে, যা ব্যবহার করে স্মার্ট কার্ড গ্রাহকরা জানতে পারবেন, কোন মেট্রো রেকে কতজন যাত্রী রয়েছেন। কোন স্টেশনে কতজন অপেক্ষা করছেন? শুক্রবার এই অ্যাপের বিষয়ে মেট্রো ভবনের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।

পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মে ক’জন দাঁড়াবে, সেটাও নির্দিষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। আপাতত সকাল ৮ থেকে রাত ৮ অবধি মেট্রো চলবে। অফিস টাইমে দুটি মেট্রোর মধ্যে ফারাক থাকবে ১২ মিনিট। অন্য সময়ে ১৫ মিনিট। সেক্ষেত্রে মানুষের ওঠানামার জন্য বাড়তি কয়েক সেকেন্ড দাঁড়াবে মেট্রো। নবান্নে সূত্রের খবর, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নিটের দিন পড়ুয়াদের জন্য মেট্রো চালানোর আর্জি জানিয়েছে রাজ্য। তাতে মেট্রো মৌখিক সম্মতি দিয়েছে বলে খবর।