কলকাতা: চিটফান্ড সংক্রান্ত একাধিক মামলায় সিবিআইয়ের কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে তাঁর বাসভবনে গিয়ে জেরা করার ব্যর্থ চেষ্টা করার পর, কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে অভিযোগ করলেন, এরাজ্যে অভ্যুত্থান করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
সিবিআই-অভিযানের খবর পেয়েই রবিবার সন্ধেয় লাউডন স্ট্রিটে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাসভবনে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, সেখানেই পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনও পুলিশ কমিশনারের পাশেই দাঁড়িয়েছেন তিনি। বলেন, এখনও বলছি রাজীব বিশ্বের সেরা কমিশনার। ও ব্যক্তি কেউ নয়, একটা চেয়ারে বসে, এত হাজার ফোর্সের মাথায়। সিক্রেট অপারেশন করতে চলে এলে! ও তো সিটকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সরকার দায়িত্ব নিতে বলেছিল। বলছে নাকি কিছুই দেয়নি। কত তদন্ত রিপোর্ট আমরা ওদেরকে তুলে দেব।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, অনৈতিকভাবে রাজীব কুমারের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। বলেন, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াই এসেছে। ওর কী দোষ? রাজনৈতিক ভাবে লড়তে না পেরে এসব করছে, মোদিকে উৎখাত করতেই হবে, নাহলে ভারত থাকবে না। এবার কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চাইছে। জনগনের থাপ্পড় খায় নি তো।
সিবিআইয়ের অবশ্য দাবি, রাজীবের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে। সিবিআই যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব বলেন, অনেক তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। অনেক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যপ্রমাণ নষ্টে হাত রয়েছে রাজীব কুমারের। সিবিআই যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিল। পুলিশ কোনওরকম সহযোগিতা করেনি। পুলিশের সহযোগিতা করা উচিত ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, বাংলাকে ঘিরে অত্যাচার চালাচ্ছে মোদি-অমিত শাহ। গায়ের জোরে ক্ষমতায় আসা যায় না মানুষ ঠিক করবে কাকে ভোট দেবে। ভোট এলেই সিবিআইকে ব্যবহার করে। রাজনৈতিকভাবে না পেরে সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, মোদির নির্দেশ সিবিআইকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বলেন, মিথ্যে বললে প্রমাণ করুন। যাকে পারছে তাকে ডেকে হেনস্থা সিবিআইয়ের। যখন যা খুশি তাই করা যায় না।
এমনকী, প্রতিবাদস্বরূপ, মেট্রো চ্যানেলের ধর্নাস্থলে বসেও বিষয়টি নিয়ে সরব হন তৃণমূলনেত্রী। বলেন, সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করছে। যে সব রাজ্যে বিরোধীরা ক্ষমতায়, সেখানে ৩৫৬ ধারা জারির চেষ্টা করছে। জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতি। আজ বাংলায় হচ্ছে, কাল অন্য জায়গাতেও হতে পারে। ওরা জানে ক্ষমতায় আসবে না, তাই এসব করছে। যেখানে বিরোধীরা ক্ষমতায় সেই সব জায়গায় রাষ্ট্রপতি শাসের চেষ্টা। সমস্ত এজেন্সি, প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করি। দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে মোদি সরকার। মোদি পাগল হয়ে গিয়েছেন। মরে গেলেও মাথা নত করব না। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করতেই এই ধর্না।
অন্যদিকে, বিজেপির দাবি, চিটফান্ডকাণ্ডে নিজেদের কেলেঙ্কারি ঢাকতে রাজীব কুমারকে আড়াল করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে কৈলাস বিজয়বর্গীয় প্রতিক্রিয়া, কিছু তো নিশ্চয়ই আছে! এই পুলিশ কমিশনার আপনার এবং আপনার দলের ৪০ হাজার কোটি টাকার চিটফান্ড কেলেঙ্কারির ফাইল লোপাটে মদত করেননি তো? সিবিআই-এর মতো সংস্থা যেখানে তদন্ত করছে, সেখানে বিনা কারণে কমিশনারের সততা নিয়ে শংসাপত্র দেওয়ার দরকার হল কেন? রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিল, নিশ্চয়ই কিছু লুকোতে চাইছে, সত্য সামনে আসবে।
সিবিআই-এর ওপর মোদি সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেও, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দাবি করেছেন, ৫ বছর ধরে বিষয়টি (চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্ত) প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো আরও বৃহত্তর ষড়যন্ত্র উদঘাটন করতে আগেই তৎপর হওয়া যেত। বামেদের ব্রিগেড সমাবেশের সাফল্য থেকে নজর ঘোরাতেই এই কাজ করা হয়েছে। সিবিআই-কলকাতা পুলিশের সংঘাতের প্রেক্ষিতে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুলেছে কংগ্রেস। অধীর চৌধুরী বলেন, আজকের ঘটনায় প্রমাণিত রাজ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তাই ৩৫৬ জারি করা হোক।
যদিও, সিবিআই সূত্রে দাবি, চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্তে পশ্চিমবঙ্গে তাদের যেভাবে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে, সে বিষয়টির পাশাপাশি রবিবারের বিশদ ঘটনা সোমবার সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হবে। কেন্দ্রীয় সংস্থার অন্তর্বর্তী অধিকর্তা নাগেশ্বর রাও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছি, ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হয় না। আমরা কাল সুপ্রিম কোর্টে যাব।
এদিকে, বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে এদিন রাতেই কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় রাস্তায় নামে তৃণমূল। দমদম নাগেরবাজারে তৃণমূলের পথ অবরোধ। আসানসোলে রাস্তা অবরোধ। রিষড়ায় রেল অবরোধ তৃণমূলের। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে অবরোধ তৃণমূলের। এই নিয়ে ধর্নাস্থল থেকে দলীয় কর্মীদের বার্তা দেন তৃণমূলনেত্রী। বলেন, রাস্তা বন্ধ করবেন না, মানুষের অসুবিধে হবে। সঙ্গে জানিয়ে দেন, কাল রাজ্যজুড়ে দুপুর ২টো থেকে ৪টে প্রতিবাদ মিছিল করবে তৃণমূল।