কলকাতা: সিবিআই বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বৈরথে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে দাঁড়াল একাধিক বিরোধী দল। সকলেই একবাক্যে ‘সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে’ রাজ্যের প্রতি সহমর্মিতা দেখাল।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জেরা তাঁর বাসভবনে সিবিআইয়ের পৌঁছে যাওয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীব কুমারের বাড়ির সামনে থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে গিয়ে মমতা দাবি করেন, ১৯-এর ব্রিগেড দেখে ভয় পেয়েই নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহ সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সরকারকে উত্যক্ত করতে। কেন্দ্র চাইছে রাজ্যে অভ্যুত্থান করতে। মমতা বলেন, উনিশ তরিখ ব্রিগেড করেছিলাম, তখনই সিবিআই অফিসারদের ডেকে বলেছিল কুছ তো করো। মোদি-অমিত শাহ রাজ্যে অভ্যুত্থান করতে চাইছে। আমি বলব ১৯ তারিখ যারা এসেছিলেন তারাও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
তৃণমূলনেত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন একাধিক বিরোধী দলের নেতা। রবিবার রাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দেন, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী, আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ একাধিক বিরোধী দলের নেতা। সহমর্মিতা দেখিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু, লালুপ্রসাদ যাদবও।





অখিলেশ যাদবের প্রতিক্রিয়া, মোদি সরকার সিবিআইকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করছে। বিজেপির গা জোয়ারি নীতির জন্য দেশ, সংবিধান এবং দেশবাসীর স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখে। এর প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নায় আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইটারে লিখেছেন, মোদি-শাহ জুটির কার্যকলাপ অদ্ভুত এবং অগণতান্ত্রিক। মমতাদিদির সঙ্গে কথা হয়েছে। পাশে থাকার কথা বলেছি।






বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও।  ট্যুইটারে তেলগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডু লিখেছেন, মোদি-শাহর জুটি সাংবিধানকে ধ্বংস করছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী নেতাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। লোকসভা ভোটের কয়েকদিন আগে দেশের ধ্বংসাত্মক চেহারা সামনে আসছে। দেশের সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষায় আমরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে রয়েছি।



তৃণমূলনেত্রীর অবস্থানের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন লালুপ্রসাদ যাদবও। ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, দেশবাসী, বিজেপি ও তার সহযোগী পক্ষপাতদুষ্ট সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। ধ্বংসের উলঙ্গ নৃত্য চলছে। সংবিধান এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপর অভূতপূর্ব সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ভোটে জেতার জন্য গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা চলছে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছি।




সিবিআইয়ের এদিনের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানাতে এবং কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার হতে রবিবার রাতে মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে উপস্থিত হন তৃণমূলের তাবড় তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা। উপস্থিত ছিলেন কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমারও। সেখান থেকেই মমতা বলেন, দেশে সুপার এমারজেন্সি চলছে। যে সব রাজ্যে বিরোধীরা ক্ষমতায়, সেই সব জায়গায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির চেষ্টা। কংগ্রেস বেশ কিছু আঞ্চলিক দল, বিজেডি, এনসিপি, এনসি, আরজেডি, আপ, সোশ্যালিস্ট পার্টি,  আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। রাহুল গাঁধীও আমাকে ফোন করেছিলেন, তখন মায়াবতীর সঙ্গে কথা বলছিলাম।
বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে সোমবার রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তৃণমূল।