পুণে: নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ২০১৬-র সেপ্টেম্বরের গভীর রাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার সময় চিতাবাঘের মূত্র, মল ব্যবহার করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজেন্দ্র নিমভোরকর, যিনি অভিযানের সময় জম্মু এলাকায় নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ১৫ কোরের প্রধান ছিলেন। সেই অভিযানের প্ল্যান কষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানেই নিমভোরকর বলেন, কেরিয়ারের শুরুতে আমি যখন নৌসেরা সেক্টরে ব্রিগেড কমান্ডার ছিলাম, লক্ষ্য করেছিলাম যে, প্রায়ই চিতাবাঘ হামলা করে কুকুরদের ওপর। রাতে চিতাবাঘের হানার ভয়ে এলাকায় থাকত না কুকুরের দল। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অভিযানের ছক তৈরির সময় এটা আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছিল যে, জওয়ানরা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরনোর সময় গ্রামের কুকুররা ডেকে উঠতে পারে। তাই তাঁরা যেতে যেতে চিতাবাঘের মল, মূত্র ফেলতে ফেলতে যান, যাতে রাতের অন্ধকারে তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন গ্রামের কুকুররা চিত্কার করে না ওঠে। এতে কুকুরদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল, নয়তো ওরা চেঁচিয়ে উঠলে ওপারের নিরাপত্তারক্ষী, সেনাবাহিনী টের পেয়ে যেত যে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের ভূখন্ডে ঢুকেছে।

পাশাপাশি ওই অভিযানের পরিকল্পনার সময় চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল বলেও জানান তিনি। বলেন, তত্কালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর প্ল্যান কার্যকর করতে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন, সেইমতো আমি জওয়ানদের সঙ্গে সেই প্ল্যান শেয়ার করি, কিন্তু কোন এলাকায় হামলা করা হবে, তা গোপন রাখি। অভিযানের ঠিক আগের দিন জানানো হয়, কোথায় কোথায় অভিযান চলবে। জঙ্গি ঘাঁটির ওপর আঘাত হানে পদাতিক সেনা ও বায়ুসেনা।

নিমভোরকর বলেন, রাত সাড়ে তিনটেয় আঘাত হানার সময় বাছা হয়, যাতে শত্রু শিবিরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা সম্ভব হয়। আমরা লঞ্চিং প্যাড অর্থাত্ যেখান থেকে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়, সেখানে জঙ্গিদের ক্রিয়াকলাপের ধাঁচ পরীক্ষা করে দেখি, ওটাই আক্রমণ চালানোর একেবারে সেরা মূহূর্ত। নির্ধারিত সময়ের আগে আমাদের বাহিনী প্রতিকূল, এবড়োখেবড়ো এলাকা পেরিয়ে শত্রুবাহিনীর নজর এড়িয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায়। তিনটি লঞ্চিং প্যাড গুঁড়িয়ে দেয় জওয়ানরা, খতম হয় ২৯ সন্ত্রাসবাদী।