রখিয়াজ মোল্লা। বাবা দিনমজুর, মা সেলাইয়ের কাজ করেন। দুজনের আয়ই নগন্য। ক্লাস ফাইভ থেকেই মায়ের সঙ্গে সেলাইয়ের কাজে হাত লাগাতে হয় রখিয়াজকে। তবেই জোগাড় হয় দুবেলার খাবারটুকু। এতকিছুর পরও একবারের জন্যও ক্লাসে সেকেন্ড হয়নি রখিয়াজ। বরাবর ঝকঝকে তার মার্কশিট।
মাধ্যমিকেও সেই ট্র্যাডিশন বজায় রাখল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবনের মথুরাপুর এক নম্বর ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের ছাত্র রখিয়াজ। বাংলায় ৯৭, অঙ্কে ৯৯, ভূগোলে ১০০ য় একশ। সবমিলিয়ে তার প্রাপ্তি ৬৮১। পূর্ণমানের থেকে মাত্র ১৯ নম্বর কম। কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের মাস্টারমশাইদের আনন্দ আজ ধরে না।
প্রাইভেট টিউশন তো দূরের কথা, রোজ স্কুলও যাওয়া হয় না রখিয়াজের। মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে হবে তো! সন্ধের পর স্কুলের স্যররাই সাহায্য করতেন রখিয়াজকে। ক্লাসের পড়াশুনো, যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতেন স্কুলের হেড মাস্টারমশাই চন্দন মাইতি।
শুধু রখিয়াজের লেখাপড়া নয়, আর্থিক দুর্দশায় তাদের পাশে দাঁড়ান তিনিই।
উমপুনের পর ঘরের চাল গিয়েছিল উড়ে। অবস্থা হয়েছিল ভেঙে পড়া তাসের ঘরের মতো। চাল-ডাল, ত্রিপল থেকে আরও যাকিছু সবই জুগিয়েছেন ছাত্রের পরিবারকে।
সামনের পথটা বড্ড কঠিন। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনার খরচ আছে। সেখানে স্কুলের স্যররা পাশে থাকবেন ঠিকই, তবে রখিয়াজের স্বপ্ন তো ডাক্তারি পড়া। তার খরচ জোগাবে কে? আনন্দের দিনেও আজ কুরে কুরে খাচ্ছে এই ভাবনা।
ছেলের স্বপ্ন কি সত্যি হবে না? রখিয়াজের বাবা-মা-মাস্টারমশাইরা অপেক্ষা করে আছেন, যদি কোনও ফরিস্তা আসেন রখিয়াজের পাশে দাঁড়াতে। প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতির আবেদন, রখিয়াজের মতো মেধাবী ছাত্রর জন্য এগিয়ে আসুন কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা।