কলকাতা: নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত। তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফসলের ন্যূনতম দাম নিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন করা হোক। কৃষকদের আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন আছে। কৃষক আন্দোলন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। ৭ মাস ধরে আন্দোলন চলছে, জোর করে আইন পাশ করেছে। কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে, এটা আমাদেরও দাবি। করোনা নিয়ে নীতির ব্যাপারে কিছুই জানাচ্ছে না। ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ৩৫ হাজার কোটি কোথায় গেল? রাজ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে আদালত। কিন্তু এরা এক কথা বলে, অন্য কাজ করে। আমরা নিজেরাই ভ্যাকসিন কিনে মানুষকে দিয়েছি। জনগণের জন্য কিছু করতে চাইলে বিভাজনের রাজনীতি করত না। কেন শুধু কৃতিত্ব দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী? রোজ এলপিজি, পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ছে। একদিকে করোনা, অন্যদিকে রোজ দাম বাড়াচ্ছে। ভ্যাকসিনের উপর কেন ৫ শতাংশ জিএসটি কেন? ভ্যাকসিনে জিএসটি বসিয়ে জীবণ-মরণের খেলা চলছে। করোনা থেকে কৃষক, সবেতেই কেন্দ্রের ভুল নীতি।’


কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কৃষক আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমরা কৃষি বিল প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমি সিঙ্গুরে ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। কৃষক আন্দোলন জারি থাকুক। ওঁদের অনুরোধ, আমরা যাতে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মিটিং করি। আমরা অবশ্যই যাব। খেতে পাচ্ছে না ভারত, এমন আইন ওরা আনে। ৭ মাস ধরে আন্দোলন চলছে, অথচ জানুয়ারি থেকে কোনও কথা বলেনি কেন্দ্র। কথা বললে কী ক্ষতি? ৩ বিল ফেরালে কী ক্ষতি? ৩ বিল বাতিল হোক।’


ভ্যাকসিন নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৮ থেকে ৪৫ বছরের অনেকে মারা গেছেন। কেন্দ্র কেন ৬ মাস আগে উদ্যোগ নেয়নি? কেন ১৮ ঊর্ধ্বদের মরতে হল? জানা নেই, কবে ভ্যাকসিন পাব। বলছে ২৫ শতাংশও কেন্দ্র সামলাবে, কেন? ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ কাজ। কাউকে ভ্যাকসিন দিলে সেটা রাজ্যকেই দিতে হয়। উনি কেন প্রাইভেট হাসপাতালকে দেবেন? ভ্যাকসিনের উপর জিএসটি এটা অন্যায়, কেন ৫ শতাংশ জিএসটি লাগাবে? এটা জীবন ও মৃত্যুর খেলা খেলছে। ১ ঘণ্টার ভাষণে জিএসটি তোলার কথা তো ছিল না। বম্বে হাইকোর্ট ঠিকই তো বলেছে।’


গঙ্গায় মৃতদেহ ভেসে আসা নিয়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একেক দিন যাচ্ছে উত্তর প্রদেশ থেকে মৃতদেহ আসছে। বাংলা ও বিহারেও গঙ্গায় মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এইভাবে কোনও দেশ চলতে পারে নাকি। বিজেপি যেভাবে রাজ করছে, তাতে শুধু খবরদারি, জোরজবরদস্তি করছে। কালো আইন আনছে কৃষকদের হয়রানি, বেকারত্ব বাড়ানোর জন্য। ভারত আজ ধুঁকছে।’


কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই কৃষক আন্দোলন চলুক। আমাদের সমর্থন আছে। কৃষকদের জন্য যারা ৭ মাস ধরে আন্দোলন করছে, এটা শুধু কয়েকটা রাজ্যের নয়। তাই আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে ভাল হয়।’


কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোথাও কাজ নেই। আর লকডাউনের জেরে তো দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। কেউ কিছু বলেই এজেন্সি লাগিয়ে দেয়। অফিসারকেও ভয় দেখানো হয়। কেউ লিখতে পারে না। এখন বুলিবন্দি করে দিয়েছে নোটবন্দির মতো। আমরা বিরোধীদের অনুরোধ করব, বিজেপিরও অনেক পুরনো লোক আছে। আর যে যুবরা বিজেপিতে গিয়েছিল তাদেরও বলব, দেশকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসুন। সব রাজ্য মিলে ফাইট করুক।আগ্রায় মক ড্রিলের নাম ২২ মৃত্যু, কী চলছে? বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিলে মোদির কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। এটা তো জনগনের টাকা। সুপ্রিম কোর্টের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এরা বলে এক, করে আরেক। আমাদের রাজ্যে যেমন ২ কোটি টিকাকরণ করেছে। এরকম অনেক রাজ্য আছে, যারা নিজেরা ভ্যাকসিন কিনে দিচ্ছেন। মোদি ভাষণ ছাড়া কিছুই দেয়নি। বিহারের ভোটের আগেই বলেছিল ফ্রি ভ্যাকসিন দেবে। কোথায় দিয়েছে? পি এম কেয়ার্স থেকে টাকা দিলে কী হত। ৩৫ হাজার কোটি, কী কাজে লাগল? জনতার জন্য করলে বিভেদ করত না। এই রাজ্যকে এত, ওই রাজ্যকে এত দিত না। আমরা কিছুই করতে চাইনি। এটাই করতে চাই, মোদিজিকে হটাতে চাই। রোজ গ্যাস, পেট্রোলের দাম বাড়ছে। কৃষকরা চাষ করবে কীভাবে? এর জন্য রান্নাঘরে আগুন লাগে। একেই কোভিড পরিস্থিতি, তার জন্য দাম বেড়েই চলেছে।’


রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে যেখানে ভোট আছে, সেখানেও বিজেপি বিরোধী প্রচার করব আমরা। বিজেপিকে কেউ ভোট দেবেন না, এই প্রচার চলবে। কারণ বিজেপি ক্ষমতায় এলেই রাজ্যকে বিক্রি করার চেষ্টা করবে। বাংলাকে তো মমতাজি বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’