কলকাতা: ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ মানেই সমর্থকদের মনে ভেসে ওঠে সেই বিখ্যাত ছবি। ১৯৯২ সালের সিডনি। উইকেটের পিছন থেকে লাগাতার আউটের আবেদন করে চলেছেন কিরণ মোরে। শেষে মেজাজ হারিয়ে ফেললেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। আচমকাই ব্যাট দুহাতে ধরে মাথার ওপর তুলে লাফাতে শুরু করলেন। ঠিক যেভাবে ভারতীয় উইকেটকিপার মোরে লাফিয়ে আবেদন করছিলেন। মিয়াঁদাদের সেই লাফ পরে ‘ফ্রগ জাম্প’ হিসাবে ক্রিকেটবিশ্বে অমর হয়ে থাকবে।


সেই ঘটনার পর ২৭ বছর কেটে গিয়েছে। বিশ্বকাপে আর একটি ভারত-পাক মহারণের চব্বিশ ঘণ্টা আগে মোরের মনে হচ্ছে, পাকিস্তান দলে এখন আর আগের মতো চারিত্রিক দৃঢ়তার কোনও ক্রিকেটার নেই। এমন কেউ নেই, যে শরীরী ভাষা দিয়েই প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারে। মুম্বইয়ের স্টুডিও থেকে শনিবার অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের জন্য হিন্দিতে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন মোরে। সেখান থেকে মোবাইল ফোনে জাতীয় দলের প্রাক্তন উইকেটকিপার বললেন, ‘পাকিস্তানের বর্তমান দলে মিয়াঁদাদ তো নেই-ই। নিদেনপক্ষে শাহিদ আফ্রিদির মতো একজন চরিত্রও নেই। এমন কেউ নেই যে প্রতিপক্ষের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইটা করবে। প্রতিভা রয়েছে। তবে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে।’ মোরে আরও বললেন, ‘মিয়াঁদাদ বড় ক্রিকেটার ছিল। সেই সঙ্গে লড়াকুও। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়ত না প্রতিপক্ষকে। সিডনির ঘটনাও সেই মরিয়া মনোভাবের কারণেই ঘটিয়েছিল।’

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রবিবার কারা ফেভারিট? মোরে বলছেন, ‘অবশ্যই ভারত। যদিও ভারত-পাক ম্যাচে পূর্বাভাস করা চলে না। যে কেউ জিততে পারে। চ্যাম্পিয়্ন্স ট্রফির ফাইনালেও পাকিস্তান ফেভারিট ভারতকে হারিয়েছিল। তবে চলতি বিশ্বকাপে আমাদের শুরুটা খুব ভাল হয়েছে। সব ম্যাচ জিতেছি। পাকিস্তান দুটো ম্যাচ হেরে গিয়েছে। একেবারেই ছন্দে নেই।’ যদিও বিরাট কোহলিদের আত্মতুষ্ট হতে নিষেধ করছেন মোরে। সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘যে কোনও দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে পাকিস্তান। পুরোটাই মনস্তত্ত্বের ব্যাপার। কে কীরকম চাপ সামলাতে পারল, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। চাপের মুখে যারা পারফর্ম করবে, এগিয়ে থাকবে তারাই।’

রবিবারের ম্যাচে আর একটা দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। বিরাট কোহলি বনাম মহম্মদ আমির। কোহলি ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান। ছন্দেও আছেন। আমির পাকিস্তানের সেরা বোলিং অস্ত্র। যদিও মোরের মতে, লড়াইটা টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে টিম পাকিস্তানের। বলছেন, ‘বিরাট ও আমিরের মধ্যে কোনও লড়াই নেই। একের বিরুদ্ধে এক নয়, দল হিসাবে কারা কেমন খেলল তার ওপর সব কিছু নির্ভর করবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ সেঞ্চুরি করলে বা পাঁচ উইকেট নিলে দলের সুবিধা হবে। তবে পারফর্ম করতে হবে সকলকেই।’ মোরে যোগ করেছেন, ‘আমির ভাল বোলার। তবে একা জেতাতে পারবে না।’

মোরের নজর থাকবে আর একজনের ওপরও। ছাত্র হার্দিক পাণ্ড্য। বঢোদরায় মোরের অ্যাকাডেমিতে খেলেই উত্থান হার্দিকের। গুরু বলছেন, ‘হার্দিক শুধু কালকের ম্যাচে নয়, সব ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ব্যাটিং আর বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও তফাত গড়ে দিতে পারে। ক্রিকেটার হিসাবেও অনেক পরিণত হয়েছে ও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে হার্দিক।’