নয়াদিল্লি: করোনামুক্তি ঘটলেও রেহাই নেই। শরীরে বাসা বাঁধতে পারে এক ধরনের ছত্রাক। যার ফলে হারিয়ে যেতে পারে দৃষ্টিশক্তি, নাক বা চোয়ালের হাড় বাদ দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এমনকী মস্তিস্ক অকেজো করে ডেকে আনতে পারে মৃত্যুও। এমনই জানাচ্ছেন দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

গত ১৫ দিনে ১২ জন রোগী মিউকরমাইকোসিস ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে গঙ্গারাম হাসপাতালে এসেছেন। কালো ছত্রাক বা মিউকরমাইকোসিসকে আগে বলা হত জাইগোমাইকোসিস। এটি খুব মারাত্মক রকমের ছত্রাক হলেও বিরল প্রজাতির ছত্রাক বলেও পরিচিত ছিল। পরিবেশে উপস্থিত একধরনের দলবদ্ধ ছত্রাক যা্ মানবদেহে মারাত্মক মাত্রার সংক্রমণ ঘটাতে পারে। যাঁরা ইতিমধ্যেই কোনও রোগে ভুগছেন বা প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের দেহে মিউকরমাইকোসিস বেশি বাসা বাঁধে।

গঙ্গারাম হাসপাতালে ইএনটি বিভাগের সিনিয়র সার্জেন মণীশ মুঞ্জল বলেছেন, ‘কোভিডের সঙ্গে সঙ্গে কোভিডজনিত মিউকরমাইকোসিসে উচ্চ মৃত্যু হার নিয়ে যেভাবে মানুষজন আক্রান্ত হচ্ছেন তা খুবই উদ্বেগের। এর বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলি হল মুখ অসাড় হয়ে যাওয়া, চোখ বা গাল ফুলে যাওয়া, নাকে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত বাধা সৃষ্টি হওয়া। নাকে শুকিয়ে যাওয়া কালো বস্তু অতি দ্রুততার সঙ্গে বায়োপসি করলে ছত্রাক প্রতিরোধজনিত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।’

দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও, ৩২ বছরের একজনের নাকে সমস্যা দেখা দেয়। নাকের বাঁদিকে অসুবিধা হচ্ছিল। তার দু’দিনের মধ্যে চোখ ফুলে যায়। এরপর চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন ওই যুবক, কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মুখের একটি দিক পুরো অসাড় হয়ে গিয়েছে। ওই যুবকের উদাহরণ দিয়ে চিকিৎসক মুঞ্জল বলেছেন, ‘টেস্টে ধরা পড়ে তাঁর সুগার রয়েছে। সংক্রমণও রয়েছে। তবে আরও মারাত্মক যেটা তা হল ওই যুবকের দেহে মিউকর নামে একটি ঘাতক বিরল ছত্রাকের উপস্থিতি, যেটা তার নাকের ময়লা থেকে পাওয়া গিয়েছিল। এমআরআই রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল সংক্রমণ ইতিমধ্যে তাঁর বাঁ দিকের সাইনাস, চোখ, উপরের চোয়ালের হাড় এবং পেশীগুলির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট করে দিয়েছে এবং মস্তিষ্কে প্রবেশও করেছে।’

চিকিৎসকরা এরপর একটুও সময় নষ্ট না করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এবং অস্ত্রোপচার করা হয়। ছত্রাকজনিত এই সংক্রমণরোধী জীবনদায়ী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। দু'সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে তাঁকে। ওই হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে, দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রোগীকে বাঁচানো যায়। কিন্তু দেরি হয়ে গেলে চোখের ভিতরে ক্ষতি করে দেয়, এর ফলে সারাজীবনের মতো দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে, এমনকি মস্তিস্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়ে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।