কলকাতা: বিকট আওয়াজ। ঝলসে ওঠা আগুন। কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ায় ঢাকল নৈহাটির আকাশ। তীব্রতা এতটাই যে, নদীর উল্টো পাড়ে কেঁপে উঠল হুগলির চুঁচুড়াও!
বৃহস্পতিবার দুপুরের ঘটনা। নৈহাটির রামঘাটে বাজেয়াপ্ত করা বাজি নিষ্ক্রিয় করতে যায় সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড আর পুলিশ। তারপরই এই ঘটনা। এমন বিস্ফোরণ, যার আতঙ্কের গ্রাসে এখনও গোটা এলাকা।
বিস্ফোরণের জেরে কেঁপে ওঠে আশপাশের বাড়ি-ঘর-দোর। ভাঙে জানলার কাচ। পুরনো বাড়ির দেওয়ালে দেখা দেয় ফাটল। যেমনটা ঠিক হয় ভূমিকম্পে।
বিস্ফোরণের পর নদীর দু’পারেই এলাকাবাসীর রাগ গিয়ে পড়ে পুলিশের ওপরই। এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে ছুটে যায় পুলিশের দিকে। সিআইডি এবং পুলিশ কর্মীদের বেদম মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সরকারি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নৈহাটিতে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়ি! নৈহাটির অপর পাড়েই চুঁচুড়া। সেখানে বিক্ষোভের মুখে পড়েন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার।
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে কাঁদানে গ্যসের শেল নিয়ে এলাকায় টহল দিতে শুরু করে পুলিশ বাহিনী।
বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উঠে এসেছে অন্য তত্ত্ব। বাজির মশলা নয়, মারাত্মক কিছু ছিল— দাবি করেছেন মুকুল রায়।
৩ জানুয়ারি, শুক্রবার। নৈহাটির দেবকে বেআইনি বাজি কারখানায় তীব্র বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, উড়ে যায় ছাদ। ঘাটনাস্থলের ৪ কিলোমিটার দূরের এলাকাও কেঁপে ওঠে। এই ঘটনায় জীবন্ত পুড়ে মৃত্যু হয় চারজনের। একজন এখনও কলকাতার এমআর বাঙুর হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
এর পরই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট ওই এলাকায় বেআইনি বাজি কারখানাগুলিতে অভিযান চালানো শুরু করে। বাজেয়াপ্ত হয় কয়েক টন মালমশলা। সে সব নিষ্ক্রিয় করতে গিয়েই বিস্ফোরণ বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দেবকের ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই বিস্ফোরণ।
ঘটনার গুরুত্ব, তীব্রতা এবং ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন বলে ট্যুইট করেছেন রাজ্যপাল। একমাত্র বিশেষ তদন্তকারী দলই ঘটনার আসল কারণ সামনে আনতে পারে বলে মতপ্রকাশ করেছেন তিনি। এই ঘটনা সরকারের চোখ খুলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট! মন্তব্য ধনকড়ের।




পেশাদারিত্ব না ট্রেনিংয়ের অভাব? না স্রেফ গাফিলতি? নৈহাটিতে বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণের পর পুলিশের ভূমিকায় উঠছে প্রশ্ন।
কতটা পরিমাণ বাজি একসঙ্গে নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল? প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা কেন ছিল না? কেন বিস্ফোরণের ফলে এত ক্ষয়ক্ষতি হল? বাজির কারখানা থেকে উদ্ধার বিস্ফোরক থেকে এ ধরনের তীব্র ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরণ কি হতে পারে? নানা মহল থেকে উঠছে প্রশ্ন।