কমিশনের জনৈক মুখপাত্র জানিয়েছেন, রেললাইনে বসা, দাঁড়ানো বুদ্ধিযুক্ত কাজ নয় ঠিকই, কিন্তু একইসঙ্গে সেদিনের ভয়াবহ, হতভম্ব করে দেওয়া ঘটনার পিছনে জেলা প্রশাসনের গাফিলতিও ছিল বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়।
১৯ অক্টোবরের রাতে রেললাইনে দাঁড়িয়ে রাবনের কুশপুতুল পোড়ানো দেখতে দেখতে ছুটে আসা ট্রেনের ধাক্কায় বহু মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনার মিডিয়া রিপোর্ট নিজে থেকেই ধর্তব্যের মধ্যে এনে কমিশন নোটিস দিয়েছে। তারা বলেছে, মনে হয়, স্থানীয় প্রশাসন ও অনুষ্ঠানের আয়োজকরা রাবনের কুশপুতুল পোড়ানো দেখতে ভিড় করা লোকজনকে ঠিকমতো সামলাতে পারেনি। অনুষ্ঠান চলাকালে দর্শকদের সুরক্ষার আয়োজন করার দায়িত্ব ছিল রাজ্য প্রশাসনের। মিডিয়ার একাংশে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দাবিমতো এটা যদি সত্যি হয় যে, রেল কর্তৃপক্ষকে ওই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অবহিত করা হয়নি, তাহলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের চরম গাফিলতি, উদাসীনতা, বেপরোয়া মনোভাবই ফুটে উঠছে। হতাহতদের মানবাধিকার মারাত্মক ভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে।
কমিশন বলেছে, হতাহতদের পরিবারগুলিকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন দেওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত নথি রাজ্য সরকার মানবাধিকার কমিশনকে দেবে, পাশাপাশি অমৃতসরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহতরা কী ধরনের চিকিত্সা পাচ্ছেন, সে ব্যাপারে সব তথ্যও দেবে বলে আশা করা যায়।
প্রসঙ্গত, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের আগাম জানানো হয়নি, তাই তাদের দায়ী করা চলে না।
এদিকে রেলওয়ে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে প্রকাশ, ২০১৫ থেকে ২০১৭-র মধ্যে রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন প্রায় ৫০০০০ লোক। বেশিরভাগ মৃত্যুই হয়েছে নর্দার্ন রেলওয়ে জোনে। ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু ঘটেছে নিরাপত্তা বিধি, হুঁশিয়ারিতে কান না দিয়ে ওভারব্রিজ ব্যবহারের পরিবর্তে ট্রেনলাইন পেরতে গিয়ে, লাইন পেরনোর সময় মোবাইল বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে।
এর মধ্যেই অমৃতসরের সেই দশেরা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নভজ্যোত কৌর সিধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করে মামলা রুজুর দাবি করা হয়েছে মুজফফরপুরের আদালতে। পঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোত সিংহ সিধুর স্ত্রী সেদিন তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেছেন আবেদনকারী তামান্না হাসমি। সমাজকর্মী তামান্না মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আরতি কুমার সিংহের এজলাসে আবেদন পেশ করে দাবি করেছেন, সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনার দায়ী একমাত্র সিধু পত্নী ও অনুষ্ঠানের আয়োজকরা। আদালত বিষয়টি বিবেচনা করে তাঁর বিচারের নির্দেশ দিক। আদালত ৩ নভেম্বর শুনানির দিন স্থির করেছে।
সেদিন ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতদের মধ্যে বিহারের চারজন আছেন।
তামান্নার সওয়াল, সেদিন সিধু-পত্নী ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বলে তাঁকে দেখতেই প্রচুর জনসমাগম হয়েছিল। তাঁর ভাষণের জন্য ভিড় বাড়তে বাড়তে ট্রেন লাইনে লোক দাঁড়িয়ে যায়। ভিড় উপচে পড়ে। তাছাড়া সেখানে নিযুক্ত সব নিরাপত্তা কর্মী জনতাকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সিধু-পত্নীর সুরক্ষাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
পেশায় ডাক্তার সিধু-পত্নী সেদিন দুর্ঘটনায় হতাহতদের সাহায্য করার বদলে তড়িঘড়ি সেখান থেকে চলে যান, মিথ্যা অজুহাত দেন যে, দুর্ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না, এমনও অভিযোগ করেছেন তামান্না।
দুর্ঘটনার টিভি ফুটেজ দেখে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন বলে জানিয়ে তামান্নার আর্জি, অন্য ধারার পাশাপাশি নভজ্যোতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫ (কোনও ধর্মকে অবমাননার উদ্দেশ্যে ধর্মস্থান অপবিত্র করা), ৩৩৬ (অন্যদের জীবন, নিরাপত্তা বিপন্ন করে তোলার মতো কাজ করা), ৫০৪ (শান্তি ভাঙায় প্ররোচনা দিতে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে অপমান) ধারায়ও মামলা দায়ের করা হোক। এইসব ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা তিন মাস থেকে ২ বছরের কারাবাস।