মঙ্গলদোই: জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি)-র সাম্প্রতিকতম খসড়াতে নাম না থাকায় আত্মহত্যা করলেন এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক এ কথা জানিয়েছেন।
গত ৩০ জুলাই অসমে এনআরসি-র সম্পূর্ণ খসড়া প্রকাশের পর এটি এ ধরনের তৃতীয় ঘটনা।
অবসরের পর আইনজীবী হিসেবে কাজ করছিলেন নীরদ কুমার দাস নামে ওই ব্যক্তি। গত প্রাতঃভ্রমণ থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। বাড়ির লোকজনই তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়। পুলিশ সুপার শ্রীজিথ টি এ কথা জানিয়েছেন।
সুইসাইড নোটে ৭৪ বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লিখেছেন, ‘এনআরসি প্রক্রিয়ার পর বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি পেতেই তিনি এই চরম পদক্ষেপ’ নিচ্ছেন। পরিবারের লোকজন এ কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয় পুলিশের এক আধিকারিকও তাঁর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে একই কথা জানিয়েছেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নীরদ কুমার দাসের স্ত্রী, তিন কন্যা, তাঁদের স্বামী ও সন্তানদের এবং বেশিরভাগ আত্মীয়স্বজনের নামই এনআরসি-তে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কিন্তু খসড়ায় তাঁর নাম বাদ পড়ায় তিনি খুবই হতাশ ছিলেন। তারওপর মাস দুয়েক আগে স্থানীয় একটি এনআরসি প্রক্রিয়া কেন্দ্র থেকে তাঁকে একটি নথি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, তাঁকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই তাঁর নাম তালিকায় ওঠেনি। এরপরই তিনি আরও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
নীরদ কুমার দাস তাঁর মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি। তবে সুইসাইড নোটে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে তাঁদের কাছ থেকে ধার হিসেবে নেওয়া ১,২০০ টাকা ফেরত দিতে পরিবারের লোকজনকে বলে গিয়েছেন।
গত রবিবার ক্ষুব্ধ পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা নীরদ কুমার দাসের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যেতে বাধা দেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য স্থানীয় এনআরসি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা।
পরে জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সরকারি বিদ্যালয়ে ৩৪ বছর শিক্ষকতার পর অবসর গ্রহণ করে নীরদ কুমার দায় আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর মঙ্গলদইয়ের জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিশ শুরু করেন।
নীরদ কুমার দাসের নাম এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়ার প্রতিবাদে বেঙ্গলি স্টুডেন্ডস ফেডারেশন আজ সোমবার খারুপেটিয়ায় বনধের ডাক দেয়।