নয়াদিল্লি: শনিবার প্রকাশিত হয়েছে অসমের নাগরিক পঞ্জিকরণের চূড়ান্ত তালিকা। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকায় নাম নেই ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের। তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ভাইপো। বাদ পড়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক। এমনকি এই তালিকায় নাম নেই বহু রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারি প্রাক্তন আমলা কর্মীরও। এমনও হয়েছে, নাগরিক পঞ্জিকরণে নাম আছে বাবার, বাদ পড়েছে ছেলে। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, নাগরিক পঞ্জিকরণ প্রক্রিয়ায় যারা নিজেদের নাগরিক প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে? নাকি রাখা হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে? নাগরিকত্ব না পাওয়া লাখ লাখ মানুষের সামনেই এই আশঙ্কাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।


রবিবার সরকার জানাল, অসমের নাগরিক পঞ্জিকরণে যাদের নাম নেই তাঁদের এখনই বিতারিত করা হবে না। এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই, যে তাঁরা রাষ্ট্রহীন। বরং নিজেদের তালিকাভুক্ত করার জন্য যে যে পদক্ষেপ ও আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হবে, সেখানে সকলকেই সাহায্য করবে সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবিশ কুমার এদিন বলেন, “এনআরসি-তে যাদের নাম নেই, তাঁদের এখনই আটক করা হবে না। তাঁরা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। তাঁদের প্রত্যেককে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। এনআরসি-তে নাম নেই মানে তাঁরা রাষ্ট্রহীন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।”





অসম সরকারও জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যারা আর্থিক দিক থেকে অপারক, তাঁদের সহযোগিতা করা হবে। যারা সমর্থ তাঁদের জন্য নয়, সমাজের যে অংশ অসমর্থ তাঁদেরকেই কেবল সাহায্য করবে অসম সরকার।


নাগরিক পঞ্জিকরণ থেকে বাদ পড়াদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে রবিশ কুমার জানিয়েছেন-


১. যাদের নাম নেই তাঁরা ট্রাইবুনালের কাছে আবেদন করতে পারেন। তবে আবেদন করতে হবে ১২০ দিনের মধ্যে। সব আবেদনরই তদন্ত করবে ট্রাইবুনাল। আবেদনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।


২. এরপরও ট্রাইবুনালের রায় নিয়ে কেউ অখুশি হলে তিনি অসম হাইকোর্টে আবেদন করতে পারেন। সেখানেও কাঙ্খিত রায় না পেলে তাঁর অধিকার থাকবে শীর্ষ ন্যায়ালয়ে আবেদন করার।


নাগরিক পঞ্জিকরণ ভুল ভরা এবং বৈষম্যমূলক। বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে এদিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৩ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সরকার স্রেফ তার পালন করেছে। কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, এনআরসি আপডেট করা একটি সংবিধিবদ্ধ, স্বচ্ছ এবং আইনি প্রক্রিয়া, সুপ্রিম কোর্টই এই রায় দিয়েছে। রবিশ কুমার বলেন, “এই প্রক্রিয়া কোনও নির্দিষ্ট শাসক পরিচালিত নয়। গোটা প্রক্রিয়ায় নজরদারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট এবং সরকার কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ করেছে। সুপ্রিম কোর্ট নিজে এই প্রক্রিয়ার জন্য দিনক্ষণ বেঁধে দিয়েছে।”


তিনি এও বলেন, “অনেক বিদেশী সংবাদ মাধ্যমেই বলা হচ্ছে এনআরসি ভুলে ভরা। অসমের মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়েই ভারত সরকার ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ভারত সরকার, অসম সরকার, অসম ছাত্র ইউনিয়ন ও অসম গণপরিষদের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া এই চুক্তি কার্যকর করার অন্যতম একটি পদক্ষেপ এনআরসি।”