নয়াদিল্লি: ইভিএমে কলকাঠি নেড়ে ভোটের ফল বিকৃত করার অভিযোগের ব্যাপারে আলোচনায় বসলেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। কিছু বিরোধী দল ইভিএমের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ব্যালটপত্রে ভোটগ্রহণের পুরানো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার দাবি করেছে। সূত্রের খবর, এই প্রেক্ষিতে যৌথ কৌশল স্থির করতে আলোচনার জন্য কংগ্রেস ওই বৈঠক ডেকেছিল। বিরোধী শিবিরের ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা, কৌশল নির্ধারণের বৈঠকে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, এনসিপি প্রধান শারদ পওয়ার, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির সতীশচন্দ্র মিশ্র, ডি এমকে-র কানিমোঝি, তৃণমূল, আমআদমি পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোকদলের প্রতিনিধিরা।
সোমবারই এ ব্যাপারে বিরোধী দলগুলি নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবে বলে জানান রাহুল। বলেন, দারুণ বৈঠক হয়েছে। সব দলই কর্মসংস্থান, কৃষি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ, এই তিন ইস্যু বিস্তারিত আলোচনায় একমত। আমরা আবার আলোচনায় বসে এইসব সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব। সামনের নির্বাচন হবে কর্মসংস্থান, কৃষি, প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ, রাফাল ডিলে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি, এসব নিয়ে।
এবারের বাজেটকে সার্জিক্যাল হামলার সঙ্গে যে তুলনা করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, রাফাল, কাজ, নোট বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের ওপর সার্জিক্যাল হামলা হবে। আহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, এ কে অ্যান্টনি প্রমুখ কংগ্রেস নেতারাও ছিলেন বৈঠকে।
বিভিন্ন বিরোধী দলের দাবি, দুনিয়ার মাত্র ২-৩টি দেশে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়, ভোটযন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করে না বলে অভিযোগ ওঠায় বাকি সব দেশ ব্যালটপত্রে নির্বাচনের রাস্তায় ফিরে গিয়েছে।
কংগ্রেস এই দাবি সমর্থন করে ইতিমধ্যেই বলেছে, লোকসভা নির্বাচন যেহেতু সামনেই, সেজন্য দেশের ৫০ শতাংশ বুথে ভোট দেওয়ার পর কাকে দিয়েছেন, সে ব্যাপারে যাতে ভোটাররা নিশ্চিত হতে পারেন, সেজন্য পেপার দেখানোর ব্যবস্থা চালু করুক নির্বাচন কমিশন।


কলকাতায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা অবশ্য কলকাতায় বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে বলেছেন, ব্যালটপত্রের যুগে ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই। দু দশকের বেশি আমাদের দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা বেশ কিছুদিন ধরেই কমিশনের ধারাবাহিক পলিসি, তা বহাল থাকবে বলেই আমার অভিমত। রাজনৈতিক দলগুলির অধিকার আছে তাদের ফিডব্যাক, অনুমান-আশঙ্কা প্রকাশ্যে জানানোর কেননা ভোটারদের পর তারাই এই ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় পক্ষ। কিন্তু আমরা ব্যালটপত্রের সময়ে ফিরছি না। ব্যালটপত্র ছিনতাই, সেজন্য বাহুবলের ব্যবহার, ভোটগণনায় অনির্দিষ্টকালের বিলম্ব, এগুলি আর চাই না।
কলকাতায় দুদিন ধরে রাজনৈতিক দল, প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। কমিশনের বাকি সদস্যরাও ছিলেন। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিরোধী দলগুলির সমাবেশে একাধিক নেতা ইভিএমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এনসি নেতা ফারুক আবদুল্লা তো সরাসরি ইভিএমকে ‘চোর মেশিন’ বলেন। তা নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই আমেরিকায় বসে এক স্বঘোষিত হ্যাকার দাবি করেন, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে রিগিং করা হয়েছিল ইভিএম হ্যাক করে। যদিও তা ‘মিথ্যা’, ‘খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তোলা’ বলে পাল্টা জানিয়ে দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
আজ তিনি বলেন, ইভিএম বিকৃত করা ও তাতে গন্ডগোল, দুটো একেবারে ভিন্ন বিষয়। শব্দগুলো এমনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেন দুটো বিষয় একই। কমিশন গন্ডগোল আটকানোর ব্যাপারে জিরো টলারেন্স পলিসি নিয়েছে। আমরা নিয়মিত ইভিএমের আপগ্রেড, তা ফুলপ্রুফ করার চেষ্টা করছি। ইভিএম বানায় উচ্চ নিরাপত্তায় চলা কোম্পানি, যারা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতেও যুক্ত, একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তা তদারকি করেন।