নয়াদিল্লি:  খুলে গেল প্যান্ডোরা বাক্স! আর্থিক কেলেঙ্কারির অন্যতম বড়সড় তথ্য ফাঁস! যে আর্থিক নথিপত্র ফাঁস হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে দেশে নজরদারি এড়াতে প্রথমসারির ব্যক্তিরা কীভাহবে তাঁর সম্পদ বিদেশী অ্যাকাউন্টগুলিতে সরিয়ে দিয়েছেন। রবিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। এই তথ্য ফাঁসের নামকরণ করা হয়েছে,  ‘দ্য পান্ডোরা পেপার্স’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, ধনকুবের, ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ও ক্রীড়াবিদদের গোপন সম্পদ ও লেনদেন ফাঁস হয়ে গিয়েছে এই নথিপত্রে। তাঁদের মধ্যে ভারতেরও কয়েকজনের নাম রয়েছে।


ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস  সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলির  ৬০০ সাংবাদিক প্যান্ডোরা পেপার অনুসন্ধানে যুক্ত ছিলেন। ফাঁস হওয়া প্রায় ১১.৯ মিলিয়ন নথিপত্রে বিদেশি আর্থিক  প্রতিষ্ঠানে অর্থ ও গোপন সম্পদ লেনদেনের তথ্য সামনে এসেছে।


ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিটাম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) বছর দুয়েক আগে এ সংক্রান্ত তথ্যগুলি পেয়েছিল। দীর্ঘ এক বছর অনুসন্ধানের পর প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।


নথি খতিয়ে দেখে প্রাপ্ত প্যান্ডোরা পেপার্সের প্রথম প্রতিবেদনে এই লেনদেন বিশেষ ধরন বিষয়টি জানানো হয়েছে।


এ সংক্রান্ত কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য


ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গিয়েছে যে, বিদেশে এই অবৈধ লেনদেন খতম করতে পারতেন, এমন ক্ষমতাবানরা গোপন কোম্পানি ও ট্রাস্টে সম্পদ লগ্নি করে সুবিধা ভোগের পথ বেছে নিয়েছেন।


সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ১৪ টি- বিদেশি পরিষেবা প্রদানকারীর গোপন নথিতে, উদাহরণ হিসেবে, দেখা গেছে যে,  এক প্রাক্তন রাজস্ব আধিকারিক, এক প্রাক্তন ট্যাক্স কমিশনার, এক প্রাক্তন সেনা অফিসার, প্রাক্তন আইন আধিকারিক ও আরও এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিদেশি সংস্থা গড়েছেন।


ভারতে রাজনৈতিক দিক থেকে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, কয়েকজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য, যাঁরা সরকারি পদেও ছিলেন। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন এমন কয়েকজন যাঁরা স্পর্শকাতর বাণিজ্য বা স্পর্শকাতর দেশগুলিতে বাণিজ্যের ব্যাপারে যুক্ত ছিলেন। এমনও কয়েকজন এই তালিকায় রয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে দেশের তদন্তকারী সংস্থা আগেই অভিযোগ দায়ের করেছে।


উল্লেখ্যস এর আগে পানামা পেপার্সে বিদেশে সম্পদ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি ফাঁস হওয়ার পর বিদেশি সংস্থার মালিকরা নতুন পন্থা বেছে নিয়েছেন।


আর্থিক অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হয়ে যাঁরা তদন্তের আওতাধীন, তাঁরা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস বা পানামার পাশাপাশি সামোয়া, বেলিজ বা কুক আইল্যান্ডের করফাঁকির স্বর্গরাজ্যগুলিতে বিদেশি নেটওয়ার্ক গড়েছেন।


সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় যে সমস্ত ব্যক্তি ও সংস্থার নাম প্রকাশ্যে এসেছে, তাঁদের মধ্যে দেশে অনেকেই তদন্তকারী সংস্থাগুলির নজরদারিতে রয়েছে। কারুর নাম উল্লেখ না করে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জেলে রয়েছেন এবং অন্যান্যরা জামিনে রয়েছেন।


এই অফসোর সিস্টেমের বিস্তারিত জানাতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যান্ডোরা পেপার্সে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে অফসোর মানি মেশিনের পর্দাফাঁস হয়েছে। এগুলি  শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত দেশ আমেরিকা সহ বিশ্বের সর্বত্র সক্রিয়।


বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুসারে, ১১৭ দেশের প্রায় ৬০০ সাংবাদিক ওয়াশিংটন ডিসি-তে আইসিআইজে কর্তৃপ প্রাপ্ত ফাইল ও তথ্য খতিয়ে দেখছেন।