কলকাতা: মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা খুব বেশি মানুষের হয় না। সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বনহুগলির বিপ্লব দেবনাথ। ২০ বছর ধরে ইতালিতে আছেন তিনি। থাকেন ভেনিসের পাশের প্রদেশ ট্রেভিসোর মন্টেবেলুনা শহরে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর চারপাশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা দেখে তিনি আতঙ্কিত। সুদূর ইতালি থেকে বাংলার সব মানুষের কাছে তাঁর কাতর আর্জি, ‘লকডাউনের সময় দয়া করে কেউ বাড়ির বাইরে যাবেন না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে বাকি সময়টা বাড়িতেই বসে থাকুন। আমি দেখেছি, মুহূর্তের গাফিলতিতে চরম বিপদ ঘনিয়ে আসে। সেই বিপদ কেউ ডেকে আনবেন না। জীবন মূল্যবান।’

ইতালি থেকে ফোনে এবিপি আনন্দকে বিপ্লববাবু জানালেন, ‘আমি এখানে ফ্লাওয়ার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করি। বনহুগলির বাড়িতে মা, দাদা আছেন। মা খুব টেনশন করছেন। আমি রোজ দু’বেলা মাকে ফোন করে বলছি, বাইরে যাবে না। দাদাকেও একই কথা বলছি। আমি চাই না আমার বাংলায় ইতালির মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক। সেই কারণে সবাইকে বলছি, বাড়ির বাইরে যাবেন না। তিন বছর আগে শেষবার দেশে ফিরেছিলাম। এবার ২২ জুনের ফ্লাইটের টিকিট কাটা ছিল। জুলাইয়ে শ্যালকের বিয়ে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে টিকিট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। কবে আবার বাড়ি যেতে পারব জানি না।’

ইতালির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিপ্লবাবু জানালেন, ‘সাতদিনের গাফিলতির জন্য এই অবস্থা হয়েছে। গাফিলতি না করলে এরকম হত না। আমরা ১৪ দিন ধরে ঘরবন্দি। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফোনে একটি ফর্ম পাঠানো হয়েছিল। সেটা পূরণ করার পর পরিবারের একজন সুপারমার্কেটে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনতে পারছে। পুলিশ-প্রশাসন খুব ভাল ব্যবস্থা করেছে। সুপার মার্কেটে ভীড় নেই। খুব তাড়াতাড়ি বাজার করা হয়ে যাচ্ছে। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত সময় বাড়ির বাইরে থাকে, তাহলে উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে জেল-জরিমানা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার খুব ভাল কাজ করছে। গতকাল থেকে একটু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা যত বেশি হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তার চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে। আশা করছি এবার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’