কলকাতা:নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও রাজনীতির অনুপ্রবেশ। আজ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই। শুরুটা হয়েছিল ভালভাবেই। প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা একসঙ্গে ঘুরে দেখেন নেতাজি গ্যালারি। দেখেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু এরপর মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য পেশ করার জন্য মঞ্চে উঠতেই দর্শকাসন থেকে ভেসে আসে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। এই স্লোগান থামানোর অনুরোধ করেন আয়োজকরা। কিন্তু এই স্লোগানে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এভাবে অপমান করা যায় না। এটা রাজনৈতিক নয়, সরকারি অনুষ্ঠান। সরকারি অনুষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান নয়। কলকাতায় এই অনুষ্ঠান করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি মন্ত্রককে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু প্রতিবাদ জানিয়ে আমি বক্তব্য রাখছি না।’ এরপর ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে নিজের আসনে গিয়ে বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী।


এরপর এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মাটি এই পুণ্যভূমি, রামকৃষ্ণ দেব, সারদাদেবী স্বামী বিবেকানন্দ, এই পুণ্যভূমি দিয়েছে গুরুচাঁদ-হরিচাঁদ ঠাকুর, এই পূণ্যভূমি আমাদের দিয়েছে শ্যামাপ্রসাদ, প্রণব মুখোপাধ্যায়। সব মহাপুরুষকে প্রণাম জানাই।’

সফরসূচি অনুযায়ী, এদিন নেতাজি ভবন থেকে প্রথমে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে যান প্রধানমন্ত্রী। নেতাজির মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য দেন। বিকেল ৪টে ১৪ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। সরকারি অনুষ্ঠান হলেও, আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা। প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়ে তাঁকে প্রণাম করেন শুভেন্দু। কিছুক্ষণ পরে ভিক্টোরিয়ায় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী।  প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর একসঙ্গে নেতাজি নামাঙ্কিত গ্যালারি ঘুরে দেখেন তাঁরা। কিছুক্ষণ পর পরীঘরের সামনে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নেতাজি পত্রাবলী নামে একটি বইয়ের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর নেতাজি স্মারক ডাকটিকিট এবং স্মারক মুদ্রা প্রকাশ হয়।

এরই মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুরুর আগে জয় শ্রীরাম স্লোগান ঘিরে তাল কাটে অনুষ্ঠানের। বক্তব্য না রেখেই পোডিয়াম ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যদের সংবর্ধনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানানোর মঞ্চে একে একে বাংলার মনীষীদের স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। এর তাৎপর্য খুঁজতে গিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন, ভোটের ময়দানে বিজেপির গায়ে যে বাঙালি বিরোধী ও বহিরাগত তকমা লাগানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল, সুকৌশলে কি তারই জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী? এ নিয়েই শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির তরজা।