কলকাতা: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলকাতায় এসেই নেতাজি ভবনে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ঘুরে দেখলেন নেতাজি সংগ্রহশালা। তবে বসু পরিবারের আপত্তিতে নেতাজি ভবনের বাইরেই থাকলেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি।


এ প্রসঙ্গে নেতাজি পরিবারের সদস্য সুগত বসু জানিয়েছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী যেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই আসেন। এখানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্মানের প্রশ্ন জড়িত। সে কথাটা অন্তত নেতাজি ভবনের ভিতরে রেখেছেন। আমরা সে ব্যবস্থা বজায় রাখতে পেরেছিলাম।। মর্যাদার সঙ্গেই আমরা প্রধানমন্ত্রীকে নেতাজি ভবন ঘুরিয়ে দেখাতে পেরেছি। আমরা গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার ছোট ভাই সুমন্ত্র বসু, যে এখন নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর ডিরেক্টর আর আমি তাঁকে অভ্যর্থনা জানাই। আমরা দু’জনই তাঁকে নেতাজি ভবন ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। সুমন্ত্রর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপ করিয়ে দিলাম। এসপিজি-র আপত্তিতে প্রধানমন্ত্রী ভিজিটর্স বুকে কিছু লেখার সুযোগ পাননি।’

সুগত বসু আরও জানিয়েছেন, ‘কোনও রাজনৈতিক নেতা ভিতরে ঢোকেননি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে নেতাজির গাড়ি, শোবার ঘর, শরৎ বসুর ঘর, নেতাজির স্টাডি, গোটা মিউজিয়াম হেঁটে ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। তবে সবকিছু তো আর ভালভাবে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী হরিপুরার কথা বলছিলেন। গুজরাতে যেখানে নেতাজি কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভাষণ দিয়েছিলেন। তাই বিশেষ করে হরিপুরার কিছু ছবি দেখিয়ে দিলাম। আর আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে ছবি, আইএনএ টুপি, বেল্ট, বুট, জাপানিদের দেওয়া তলোয়ার, আরও অনেক ছবি দেখিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী নেতাজি ভবনে ঢোকার আগে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছিলেন, তাঁরা ভিতরে ঢুকবেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাঁরা ভিতরে ঢুকতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে সুগত বসু বলেছেন, ‘আজ নেতাজির জন্মদিন। আজকের দিনে কোনও রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে যেতে চাই না। ১৯৬১ সালে নেতাজি মিউজিয়াম হয়। সে বছরই জওহরলাল নেহরু এসেছিলেন। জওহরলাল নেহরু থেকে মনমোহন সিংহ, সব প্রধানমন্ত্রীকে আমরা দেখেছি। তাঁরা সবাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এসেছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে আসেননি। প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা, নেতাজির প্রতি সম্মান জানানোর জন্য আমরা ঠিক করেছিলাম, উনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই আসবেন, কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে না। আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী আসেন। উনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এসেছিলেন। দলের কাউকে আনেননি। নেতাজি যেহেতু দলীয় রাজনীতির অনেক ঊর্ধ্বে, তাই আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা রেখেছিলাম। নেতাজির ১২৪-তম জন্মবার্ষিকীতে যেহেতু উনি এসেছেন, তাই ওঁর প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই আসা উচিত। সেভাবেই তাঁর সফর হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী আসতেই পারেন। আমাদের অবারিত দ্বার। যে কেউ এসে নেতাজি সংগ্রহশালা দেখে যেতে পারেন। আজ আমাদের ধ্বনি দেওয়া উচিত, ‘নেতাজি জিন্দাবাদ’ এবং ‘জয় হিন্দ’। আদর্শের জন্য আমাদের দেশে নেতাজি ও গাঁধীজি, দু’জনকেই প্রয়োজন। ১৯৯৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতাজির জন্মদিনে এসেছিলেন নরসিংহ রাও। নেতাজির আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি। নেতাজিকে ‘দেশনায়ক’ হিসেবে সম্বোধন ধরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমার তাই ‘দেশনায়ক দিবস’-ই অনেক বেশি ভাল লেগেছে। ‘পরাক্রম’ আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি।’