নয়াদিল্লি: সংসদে পাশ হওয়ার পর তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিলে সম্মতি দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গেজেটের মাধ্যমে তা প্রকাশ করল কেন্দ্র। অর্থাৎ, নতুন বিল কার্যকর করতে আর কোনও বাধা রইল না। ফলে, এখন থেকেই মুসলিমদের মধ্যে তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাৎক্ষণিক তিন তালাক রোধে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল কেন্দ্র। এবার, তা সরিয়ে সেই জায়গা নেবে নতুন বিল। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এই নতুন বিল-- মুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অফ রাইটস অন ম্যারেজ) আইন, ২০১৯ -- এর ফলে তালাক-এ-বিদ্দত বা একই ধরনের তালাক যার মাধ্যমে স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক এবং অপ্রত্যাহারযোগ্য বিবাহবিচ্ছেদ দিত মুসলিম স্বামীরা, সেই নিয়ম বেআইনি ও অবৈধ হল।
নতুন আইনের ফলে, মৌখিক বা লিখিত অথবা এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপ সহ যে কোনও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে দেওয়া তাৎক্ষণিক তিন তালাককে অবৈধ ঘোষণা করা হবে। কোনও মুসলিম ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে এভাবে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিলে তাঁর বিরুদ্ধে এই আইন অনুযায়ী তিন বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাবাসের সাজা ও জরিমানাও ধার্য করা হবে।
চলতি বছরের গোড়ায় প্রথম মোদি সরকারের আমলের শেষদিকে এই বিল লোকসভায় পাশ হলেও, রাজ্যসভায় সংখ্যার অভাবে আটকে যায়। সেই সময় কেন্দ্র অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল। দুমাস আগে লোকসভা ভোটে বিপুলভাবে জিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই এই বিল সংসদে পাশ করাল মোদি সরকার-২।
মঙ্গলবার, রাজ্যসভায় ৯৯-৮৪ ভোটে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিল পাশ হয়। রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, টিআরএস ও ওয়াইএসআর-কংগ্রেসের সহ বিরোধীদের একাধিক সাংসদ অনুপস্থিত থাকায় এনডিএ এই বিল পাশ করাতে সক্ষম হয়। এর আগে, গত সপ্তাহে লোকসভায় বিল পাশ করা হয়। ভোটাভুটি থেকে ওয়াকআউট করে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস।
বিরোধীদের অভিযোগ, যে ভাবে বিল পাশ করা হচ্ছে, তাতে বহুক্ষেত্রে মুসলিম পুরুষরা অযথা হয়রানির শিকার হবে। বিল অনুযায়ী, কোনও অভিযোগের ভিত্তিতে একজন পুলিশ অফিসার কোনওপ্রকাল পরোয়ানা ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারবেন। যে কারণে, বিরোধীরা এই বিলকে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছিল।
যদিও, সরকারের পাল্টা দাবি, অপব্যবহার রুখতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ কেবলমাত্র তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শিকার হওয়া মহিলা ও তাঁর নিকটাত্মীয়ই দায়ের করতে পারবেন। মহিলার বক্তব্য শোনার পর ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।