কলকাতা : প্রকাশ করা হয়নি মেরিট লিস্ট! নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নেই কোনও স্বচ্ছতা! হয়েছে স্বজনপোষণ-দুর্নীতি! রাতারাতি রাত ১ টা ১০ মিনিটে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি মেনে নেওয়া যায় না, কারণ যোগ্যরা চাকরি পাননি! প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের তালিকা প্রসঙ্গে এমনই সব গুরুতর অভিযোগ করলেন চাকরীপ্রার্থীরা। সোমবারই রাজ্য সরকারের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ক্ষোভ প্রকাশের মাঝে যে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর বার্তা পরীক্ষার্থীদের।


বাঁকুড়ার মগরার তাপস কর্মকারের কথায়, ‘‘যে চাকরিপ্রার্থীরা পিটিশন করেছেন তারা সকলেই যোগ্য প্রার্থী ৷ যথেষ্ট ভাল ইন্টারভিউ দিয়েছেন ৷ কিন্তু কোনও মেরিট লিস্ট প্রকাশ না করেই কীভাবে রাতারাতি চাকরিতে নিয়োগ করা হচ্ছে ? সেখানেই প্রশ্ন আমাদের ৷ এখানে কোনও তালিকা প্রকাশ হয়নি ৷ সবাই নিজে নিজে রোল নম্বর দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন রেজাল্ট ৷ যোগ্যদের এখানে বঞ্চিত করা হয়েছে ৷ নিয়োগে দুর্নীতি যে হয়েছে তা স্পষ্ট ৷ কোনও স্বচ্ছতা নেই ৷ স্বজনপোষন এবং দুর্নীতিই হয়েছে ৷ যেভাবে রাতারাতি গত ১৫ তারিখ রাত ১টা ১০ মিনিটে নিয়োগের রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে ৷ তা মেনে নেওয়া যায় না ৷ একদিন-দু’দিনের মধ্যে নোটিসে এটা কী ভাবে সম্ভব ?


প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার পরই হয় মামলা। যার রায়ে এদিন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ৪ সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানি। আর আদালতের রায়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি প্রাথমিকে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।


এরপরই তৎপর হয় শিক্ষা দফতর। বিধানসভা ভোটের মুখে গত মঙ্গলবার প্রাথমিকে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। মামলাকারীদের অভিযোগ, প্রাথমিকে যে নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে তার কোনও মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এসএমএস বা ফোন করে প্রার্থীকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। সোমবার হাইকোর্টে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়।


শুনানি শেষে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি। এর আগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। এদিন আদালতে ধাক্কা খাওয়ার পর তৃণমূল সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। প্রাথমিকে শূন্য পদে নিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই ১০ থেকে ১৭ জানুয়ারি রাজ্যজুড়ে চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ শুরু হয়। যে সমস্ত প্রার্থীরা ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ নেন, তাঁদের কাছে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছিল।


আবেদন করেছিলেন প্রায় ২৬ হাজার ৫০০ জন। এর পর সাড়ে ১৬ হাজার শূন্য পদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৮৪ জনের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পর্ষদ। সেই নিয়োগের উপর অন্তবর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিল। ৪ সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানি।