উন্নাওয়ের নির্যাতিতার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। তড়িঘড়ি চিকিত্সার জন্য তাঁকে বিমানে করে দিল্লির সফদরজঙ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাঁচানো গেল না তাঁকে। গতকাল রাতেই মারা যান তিনি। এই ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরেই প্রতিবাদে উত্তাল উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে রাজধানী দিল্লি। উত্তরপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যেই নির্যাতিতার পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ও একটি বাড়ি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যায় মানুষ দেশ দুড়ে একের পর ক্রমবর্দ্ধমান ধর্ষণ ও মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন।
এদিন উন্নাওয়ের নির্যাতিতার বাড়িতে যান উত্তরপ্রদেশ সরকারের দুই মন্ত্রী স্বামী প্রসাদ মৌর্য্য ও কমল রানি বরুণ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ। সেখানে যাওয়ার পথে মন্ত্রীদের গাড়ি থামিয়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মীরা।
নির্যাতিতাদের প্রতি ন্যায়বিচার ও দেশে মহিলাদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে দিল্লির যন্তরমন্তরে মোমবাতি মিছিল হয়।
দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রধান স্বামী মালিওয়াল দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের অনশনে বসেছেন। তাঁর সমর্থনে রাজঘাট থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত একটি মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করা হয়।
উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের হজরতগঞ্জে প্রতিবাদরত কংগ্রেস কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
উন্নাওয়ের নির্যাতিতার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় পুলিশ বলপ্রয়োগ করলে স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা সহ বেশ কয়েকজন প্রতিবাদকারী জখম হন। তাঁরা মন্ত্রী ও সাক্ষী মহারাজের বিরুদ্ধে গো ব্যাক স্লোগান দেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার পর দুই মন্ত্রী ও সাংসদ নির্যাতিতার বাড়িতে পৌঁছতে পারেন।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ফাস্ট ট্রাক আদালত গঠন করে অভিযুক্তদের যত দ্রুত সম্ভব শাস্তির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবে সরকার। তিনি মৃতের পরিবারকে সমবেদনাও জানিয়েছেন।
নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সফদরজঙ হাসপাতালের এক চিকিত্সক বলেছেন, সব ধরনের চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হল না। সন্ধের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।রাত ১১.১০ টা নাগাদ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাঁর। ১১.৪০ টা নাগাদ তিনি মারা যান।
নির্যাতিতার দেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে তাঁর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ভাই বলেছেন, যেখানে ও গিয়েছে, সমস্ত অভিযুক্তদের সেখানে পাঠালে তবেই ও বিচার পাবে। ওকে বাঁচাতে পারলাম না। এজন্য আমি খুবই দুঃখিত।
ধর্ষণের মামলার শুনানিতে যোগ দিতে রায়বরেলির আদালতে যাওয়ার পথে উন্নাওয়ের সিন্দুপুর গ্রামে নির্যাতিতার ওপর হামলা চালানো হয়। হরিশঙ্কর ত্রিবেদী, রাম কিশোর ত্রিবেদী, উমেশ বাজপাই, শিবম ও শুভম ত্রিবেদী নামে পাঁচজন তাঁকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ। নির্যাতিতাকে মারা হয়, ছুরি দিয়ে কোপানো হয় এবং গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।
কিন্তু ওই অবস্থাতেই উঠে দাঁড়িয়ে এক কিলোমিটার হেঁটে এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছন। ওই ব্যক্তি বাড়ির বাইরে কাজ করছিলেন। তাঁর কাছে সাহায্য চান নির্যাতিতা। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে লখনউয়ের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে প্লাস্টিক সার্জারি বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। নির্যাতিতার বয়ান সেখানেই সংগ্রহ করা হয়।
উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গাঁধী। তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশী সংবাদমাধ্যমে ভারত এখন 'ধর্ষণের রাজধানী’ বলে পরিচিত হয়ে উঠেছে এবং মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ভারত ব্যর্থ কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
রাহুল বলেছেন, উত্তরপ্রদেশের এক বিজেপি বিধায়ক এক মহিলার ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও বলছেন না। কেরলের ওয়েনাড়ে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল উন্নাওয়ের নির্যাতিতার মৃত্যকে মানবতার পক্ষে লজ্জা বলে মন্তব্য করেছেন। নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন তিনি।
রাহুল বলেছেন, এই ঘটনায় তিনি স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ। বিচার ও নিরাপত্তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আরও এক কন্যার মৃত্যু হল।