হায়দরাবাদ: ২৫ বছরের তরুণী পশু চিকিৎসককে আগেই লক্ষ্য করেছিল অপরাধীরা। সেইমত ছক কষে পাংচার করে দেয় তাঁর বাইকের টায়ার। রাস্তায় বিপাকে পড়া ভীত মেয়েটির কাছে এরপর এগিয়ে যায় সাহায্যের ছুতো করে। ৪ অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর টানা জেরা করে এ কথা জানাল হায়দরাবাদ পুলিশ।


ধৃত ৪ অভিযুক্তের নাম মহম্মদ আরিফ, জল্লু শিবা, জল্লু নবীন ও চিন্তাকুন্তা চেন্নাকেশভুলু। প্রধান অভিযুক্ত মহম্মদ আরিফ। এরা সকলেই ট্রাকের চালক ও খালাসি, নারায়ণপেট জেলার বাসিন্দা। সাইবারাবাদ পুলিশ কমিশনার ভি সি সাজ্জানার জানিয়েছেন, বুধবার ঘটনার দিন সন্ধে ৬টা ১৫ নাগাদ ওই চিকিৎসক যখন সামসাবাদ টোল প্লাজায় তাঁর বাইক পার্ক করছিলেন তখনই মদ খেতে খেতে আরিফরা তাঁকে লক্ষ্য করে। এরপর ছক কষে তারা। নবীন গিয়ে তাঁর বাইকের পিছনের চাকা পাংচার করে দেয়। রাত নটা নাগাদ কাজকর্ম সেরে ফিরে আসেন চিকিৎসক, দেখেন, বাইক চলছে না। তখন আরিফ ট্রাক থেকে নেমে তাঁর কাছে গিয়ে বলে, চাকা তো পাংচার হয়ে গিয়েছে, সারাতে হবে। অন্য এক ট্রাক চালককে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভীত তরুণী তাদের সাহায্যের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। শিবা এরপর বাইক নিয়ে চলে যায় সারানোর নাম করে। ধু ধু হাইওয়েতে ফাঁকা টোল প্লাজার পাশে তখন একা দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান তরুণী।  এ সময় পিছন থেকে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আরিফ, নবীন ও চেন্নাকেশভুলু। কাছের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে তারা।

ঘটনার সময় আরিফ চিকিৎসকের মুখ চেপে রেখেছিল, ফলে দম আটকে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর দু’জন তাঁর দেহ ট্রাকে নিয়ে চলে যায় কিছু দূরে, অন্য দু’জন তাঁর বাইক নিয়ে একাধিক পেট্রোল পাম্পে যায়, বোতলে করে পেট্রোল নিয়ে আসে। এরপর চাতানপল্লী আন্ডারপাসের নীচে তাঁর দেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেয় তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, ৪ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা রুজু করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া সূত্র ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজ পায় পুলিশ। চিকিৎসক হত্যার ঘটনায় এই ৪ জনকে গ্রেফতারের মিনিটকয়েকের মধ্যেই সামসাবাদের কাছে আর এক মহিলার পোড়া দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের ধারণা, এই ক’জন দ্বিতীয় ঘটনাতেও জড়িত।

মৃতার বোন জানিয়েছেন, রাত ৯টা ২২ মিনিটে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করেন। বলেন, খুব ভয় করছে, কয়েকজন তাকিয়ে রয়েছে, কান্না পাচ্ছে আমার। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না, যতক্ষণ না বাইকটা সারিয়ে আনছে আমার সঙ্গে কথা বল। ওরা সকলে বাইরে দাঁড়িয়ে, আমার ভীষণ ভয় করছে। তাঁর বোন তাঁকে বলেন, বাইক ছেড়ে দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে ফিরে আসতে। পৌনে দশটা নাগাদ চিকিৎসকের বোন ফোন করে দেখেন, ফোন সুইচড অফ। বাড়ির লোক টোল প্লাজায় গিয়ে আর তাঁর খোঁজ পাননি। খোঁজাখুঁজির পর রাত তিনটে নাগাদ খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পরদিন সকালে আন্ডারপাসের নীচ থেকে উদ্ধার হয় পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া দেহ।