কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: মাত্র এক সপ্তাহ আগেই রত্না চট্টোপাধ্যায়ের হাতে তাঁর স্বামী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পূর্বের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল তৃণমূল। রত্নাকে পাশে বসিয়ে তা ঘোষণা করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বেহালা পূর্বের যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করতে প্রতিটি কাউন্সিলরের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করবেন রত্না।’ আর আজ রত্না জানালেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার। এটা আমার একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’


এক সপ্তাহের মধ্যেই রত্নার সিদ্ধান্ত বদল ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠেছে, রত্নাকে সরিয়ে তবে কি শোভনের দলে ফেরার রাস্তা প্রশস্ত করল তৃণমূল? রাজনৈতিক মহলের অনেকে বলছেন, এর নেপথ্যে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক। যে বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রত্নার বদলে শোভন-ঘনিষ্ঠ সুশান্ত ঘোষের দায়িত্বপ্রাপ্তি।

যদিও রত্না দাবি করেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন। শোভনের স্ত্রী বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, বেহালা পূর্ব হাতের তালুর মতো চেনা হয়নি। অত বড় জায়গা দেখা সম্ভব নয়। ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে মনসংযোগ করব। আমাকে দিদি বলেননি, তুই ছেড়ে দে। অভিষেকও কিছু বলেনি। নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’

শোভনের বেহালা পূর্বর দায়িত্ব থেকে রত্নার সরে যাওয়ার প্রসঙ্গে বৈশাখী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। গত মঙ্গলবার পার্থর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সূত্রের খবর, পার্থর বাড়িতে গিয়ে বৈশাখী জানিয়ে আসেন, শোভনের বিষয়ে তৃণমূল আগ্রহ না দেখালে, পুরভোটের আগে তিনি বিজেপি-তে সক্রিয় হলে আর কিছু করার থাকবে না।

সূত্রের দাবি, এই আবহে শোভনকে সক্রিয় করতে তত্‍পর হয় গেরুয়া শিবির। কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বয়ং বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। এরই পাশাপাশি তৃণমূল শিবিরেও তৎপরতা দেখা যায়। সূত্রের দাবি, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্যোগে শোভনের প্রতিনিধি হিসেবে নবান্নে যান বৈশাখী। শোভনের তৃণমূলে ফেরার সম্ভাব্য বাধাগুলির কথাও জানিয়ে আসেন তিনি। সেই বৈঠকের একদিন পরেই দায়িত্ব ছাড়ার কথা প্রকাশ্যে জানালেন রত্না। দায়িত্ব পেয়ে সবাইকে  নিয়ে কাজ করার বার্তা শোভন ঘনিষ্ঠ নেতা সুশান্তর। তিনি জানিয়েছেন, ‘সবাইকে নিয়ে কাজ করব, শোভনবাবু ফিরবেন কি না এটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় এবং দলের সিদ্ধান্ত।’

এই প্রেক্ষিতে শোভনকে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। সব্যসাচী দত্ত বলেছেন, ‘উনি বৃহত্তর কাজে ব্যস্ত আছেন, তাই দলের কর্মসূচিতে আসেন না।’ তাহলে কি পুরভোটের আগে তৃণমূলেই সক্রিয় হবেন শোভন? জল্পনা তুঙ্গে।