ভগবান আয়াপ্পা ব্রহ্মচারী, তাঁর মন্দিরে ১০-৫০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রবেশাধিকার নেই। প্রাচীন এই রীতি অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, যে কোনও বয়সের মহিলারা শবরীমালায় প্রবেশ করতে পারবেন। তারপর থেকেই ঈশ্বরের আপন দেশ কেরলে এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। আয়াপ্পার মহিলা ভক্তরাও পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল ৫ দিনের জন্য খুলে গিয়েছে শবরীমালা মন্দির। এক মহিলা সাংবাদিক ও অন্য এক মহিলা গতকাল মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করলে ভক্তরা তাঁদের ফিরিয়ে দেন। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আয়াপ্পার অনুগামীরা, লাঠিচার্জ করে পুলিশও। মহিলা সাংবাদিকদের হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ, তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, ভক্তরা রাস্তা আটকে দেওয়ায় ফিরতে বাধ্য হন মন্দিরে প্রবেশাধিকার চাওয়া জনাকয়েক মহিলা।
দিল্লিতে কর্মরত বিদেশি সংবাদমাধ্যমের যে মহিলা সাংবাদিক গতকাল মন্দিরে প্রবেশ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হন, আজও তিনি মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর এক পুরুষ বিদেশি সহকর্মী। কিন্তু শবরীমালা পাহাড়ে কিছুটা ওঠার পর আয়াপ্পা অনুরাগীরা ফিরে যেতে বাধ্য করেন তাঁদের। পুলিশ জানিয়েছে, তারা ওই সাংবাদিককে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত ছিল কিন্তু তিনি নিজেই আর ঝুঁকি নিতে চাননি। কয়েক এলাকায় বাসের ওপর ইটপাটকেল পড়েছে, পাম্বা, নীলাচল সহ কয়েকটি এলা্কায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
গতকাল আয়াপ্পা ভক্তদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের বিরোধিতায় শবরীমালা প্রোটেকশন কমিটি কেরলে আজ ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে। একই সঙ্গে বনধ ডেকেছে প্রবীণ তোগাড়িয়ার অন্তরাষ্ট্রীয় হিন্দু পরিষদও, তাদের দাবি, কেরলের সিপিএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইন পাশ করুক। রাজ্য সরকার অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে না, মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্য বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়েই রায়ের বিরোধিতা করেছে। বিজেপি ও তার এনডিএ সহযোগীরা বনধ সমর্থন করেছে, কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা বনধে যোগ দেবে না, তবে রাজ্য জুড়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতায় মিছিল বার করেছে তারা। আরএসএস জানিয়েছে, শবরীমালায় নির্দিষ্ট বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার না থাকার রীতি আজকের নয়, তা বরাবর পালিত হয়ে এসেছে। যাঁরা এর বিরুদ্ধে আদালতে যান, তাঁরা মন্দিরে যান না। অসংখ্য মহিলা শবরীমালার রীতিনীতি সারা জীবন মেনে চলেছেন। তাঁদের অনুভূতির ব্যাপারে শীর্ষ আদালত ভাবনাচিন্তা করেনি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানদের মতামতও ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি তারা।