অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা: পেট্রোল-ডিজেলের দাম সামান্য কমলেও, বাজারে অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমার লক্ষণ নেই। লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্য, আকাশ ছুঁয়েছে সোনা। এই পরিস্থিতিতে চাকরিজীবী ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে ফের ধাক্কা। ইপিএফ-এ সুদের হার কমার এক সপ্তাহের মধ্যে ফিক্সড ডিপোজিট ও সেভিংসে ফের সুদের হার কমাল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ১০ জানুয়ারি, ১০ ফেব্রুয়ারির পর এবার ১০ মার্চ। ২ মাসের মধ্যে তৃতীয়বার! এবং এক মাসে দু-বার কমল এফডি-র সুদ। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এসবিআইয়ের দেখানো পথেই এবার হাঁটবে অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলি।

এক বিজ্ঞপ্তিতে এসবিআই-এর তরফে জানানো হয়েছে, ২ কোটি টাকার কম স্থায়ী আমানতে সুদের হার কমানো হচ্ছে। ৭ থেকে ৪৫ দিনের ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার কমে হল ৪ শতাংশ। আগের দুই পর্যায়ে যা ছিল ৪.৫ শতাংশ। ৪৬ থেকে ১৭৯ দিনের সঞ্চয়ে অপরিবর্তিতই থাকল, ৫ শতাংশ। ২ মাস আগে যা ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ১৮০ দিন থেকে ১ বছরের এফডি-তে সুদ অপরিবর্তিত ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২ মাস আগে ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ১ থেকে ১০ বছরের ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার ৬ শতাংশ থেকে কমে হল ৫.৯ শতাংশ।
১০ জানুয়ারি যা ছিল ৬ দশমিক এক শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ শৈবাল কর বলেছেন, ‘ধারাবাহিকভাবে সুদের হার কমছে। উন্নত দেশে সুদের হার কম, তবে তার বিনিময়ে কিছু সুবিধা দেওয়া হয়, যেমন বয়স্কদের বিনামূল্যে চিকিৎ‍সা। কিন্তু এখানে সেটা নেই। তাই এটা দুর্ভাগ্যজনক।’

এফডি-র সুদ কমানোর পাশাপাশি, সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদেও কোপ দিয়েছে এসবিআই। বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, সেভিংসের নতুন সুদের হার ৩ শতাংশ। এখন ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ে সুদ মেলে ৩.২৫ শতাংশ। ১ লক্ষ টাকার ওপরে ৩ শতাংশ। একদিকে যখন এফডি ও সেভিংসে সুদ কমানোর রাস্তায় হেঁটেছে এসবিআই, তখন বাড়ানো হয়েছে লকার ভাড়া। ছাড় শুধু ন্যূনতম ব্যালান্স এবং এসএমএস চার্জে। এতদিন নিয়ম ছিল সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে মাসিক ন্যূনতম ব্যালেন্স। শহরের গ্রাহকদের জন্য যা ছিল ৩ হাজার টাকা, আধা শহর বা মফস্বলে ২ হাজার এবং গ্রামীণ এলাকার গ্রাহকদের জন্য ১ হাজার টাকা। এই ন্যূনতম ব্যালেন্স না থাকলে দিতে হত জরিমানা। এবার এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে এসবিআই।

মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীদের অবসরের পর সবচেয়ে বড় ভরসা পিএফ। সম্প্রতি সেই সঞ্চয়েও পড়েছে কোপ। এক ধাক্কায় তা কমেছে দশমিক ১৫ শতাংশ। মার্চের শুরুতেই ৮.৬৫ শতাংশ থেকে সুদের হার কমে হয়েছে ৮.৫ শতাংশ। গত সাত বছরে যা সর্বনিম্ন। যদিও সুদ কমনোর কারণ হিসেবে অদ্ভূত সাফাই খাড়া করেছেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার। তাঁর দাবি, ‘আগের বারের সুদে প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। তাই ভবিষ্যতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।’ এই পরিস্থিতিতে কী খাবেন, আর কী জমাবেন, তা বুঝে উঠা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্তদের কাছে।