নয়াদিল্লি: তাঁর উদ্দেশ্যে লেখা উন্নাওয়ের নির্যাতিতার প্রাণহানির আশঙ্কা করে লেখা চিঠি পৌঁছতে কেন এত দেরি হল, তার কারণ জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের মহাসচিবের রিপোর্ট তলব করলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
এদিন উন্নাওকাণ্ডের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত এখনও এই চিঠি দিনের আলো দেখতে পেল না। অথচ, সবকটি সংবাদমাধ্যমে তা এমনভাবে প্রকাশিত হল যেন আমি সেটি পড়েছি। নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে গগৈ ছাড়াও বিচারপতি দীপক গুপ্ত ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোসকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমন দেখানো হয়েছে যে চিঠি পড়েও প্রধান বিচারপতি কোনও ব্যবস্থাগ্রহণ করেননি। ফলে, এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে, আমাদের কিছু একটা করতেই হবে।
এদিন উন্নাওকাণ্ডের দ্রুত শুনানির দাবি তোলেন শিশু-ধর্ষণ মামলাগুলিতে আদালত-বান্ধবের ভূমিকা নেওয়া প্রবীণ আইনজীবী ভি গিরি। সেখানেই তিনি এই চিঠির বিষয়টি উল্লেখ করেন। শুনানিতে, শীর্ষ আদালতের সেক্রেটারি জেনারেলের রিপোর্ট তলবের পাশাপাশি, দুর্ঘটনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে স্টেটাস রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে বৃহস্পতিবারই শুনানির দিন ধার্য করেছে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, দুর্ঘটনাকাণ্ডের তদন্তের ভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ইতিমধ্যেই, রায় বরেলির গুরকক্সগঞ্জ অঞ্চলে দুর্ঘটনাস্থল ময়না করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। স্থানীয় থানার থেকে সব রিপোর্ট নিয়েছেন। পাশাপাশি, ধর্ষণকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল সিবিআই।
উন্নাওকাণ্ডের নির্যাতিতার দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিতর্কের জেরে মঙ্গলবারই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রবিবার, রায় বরেলিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম হন উন্নাওকাণ্ডের নির্যাতিতা। যে গাড়ি করে তিনি, পরিবারের সদস্যরা ও তাঁর আইনজীবী যাচ্ছিলেন, তাকে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলেই মারা যান পরিবারের দুই সদস্য। নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী গুরুতর জখম হন। সোমবার, এই ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবারের তরফে দুর্ঘটনার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের দাবি করলে সেঙ্গার সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ দায়ের করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
প্রসঙ্গত, উন্নাওয়ের মাখি থানার বাসিন্দা এই তরুণী উত্তরপ্রদেশের বাঙ্গেরমউ কেন্দ্রের চারবারের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে বাড়িতে ডেকে তাঁকে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযোগ দায়ের করছে না দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকারি বাসভবনের বাইরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। তখনই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
অন্যদিকে, উন্নাও-কাণ্ড নিয়ে এদিন তুমুল হই-হট্টগোলের সাক্ষী থাকল লোকসভা। এই ঘটনায় সরকারের জবাবদিহি দাবি করে লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন বিরোধী সাংসদরা।