নয়াদিল্লি: নোটবন্দির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করলেন ডঃ মনমোহন সিংহ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বললেন, সময় যত যাচ্ছে, নোট বাতিলের ক্ষতচিহ্ন, ঘায়ের দাগগুলো আরও বেশি ফুটে বেরচ্ছে!
বিমুদ্রাকরণকে ‘দুর্ভাগা’, ‘খারাপ ভাবনাবাহী’ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে মনমোহন বলেন, ভারতীয় অর্থনীতি ও সমাজে এর ফলে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা এখন সকলে দেখতে পাচ্ছেন। নোট বাতিলে বয়স, জাতপাত, ধর্ম, লিঙ্গ, পেশা নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষের ক্ষতি হয়েছে। সময় অনেক কষ্ট মুছে দেয়, কথাটা প্রায়ই বলা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, নোট বাতিলের ক্ষেত্রে তার ঘা, ক্ষতগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
নোট বাতিলের পর জিডিপি বৃদ্ধির হারে ‘বড়সড় পতন’ হওয়ার চেয়েও বড় প্রভাব এখনও প্রকাশ্যে আসছে বলে অভিমত জানান মনমোহন। বলেন, বিমুদ্রাকরণের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি ভারতের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ ছোট ও মাঝারি শিল্প-ব্যবসা। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, আমাদের যুবকদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কাজ তৈরি করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে অর্থনীতি। আর্থিক বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। বিমুদ্রাকরণের ফলে তৈরি হওয়া নগদের ঘাটতি পরিকাঠামোগত ক্ষেত্র্রে ঋণদাতা ও ব্যাঙ্ক-বহির্ভূত আর্থিক পরিষেবা সংস্থাগুলির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
নোটবাতিলের সামগ্রিক প্রভাব, ফল এখনও পুরোপুরি টের পাওয়া যায়নি বলেও অভিমত জানান মনমোহন। বলেন, মুদ্রার দাম পড়ছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। ফলে অর্থনীতির বুনিয়াদি ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করেছে। তাই আর কোনও বিবেচনাবোধহীন স্বল্পমেয়াদি আর্থিক পদক্ষেপ না নেওয়াই সমীচীন যাতে অর্থনীতি ও আর্থিক বাজারে আরও বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সরকারকে আর্থিক নীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানোর পরামর্শও দেন মনমোহন। বলেন, কীভাবে আর্থিক হঠকারী পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে দেশের ক্ষতি করতে পারে, সেটা মনে করার দিন আজ, এটাও বোঝার দিন যে, আর্থিক নীতি তৈরির কাজটি করা উচিত ভাবনাচিন্তা, সাবধানতার সঙ্গে।
মনমোহনের দল কংগ্রেস আজ নোট বাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে ‘ধ্বংস, চুরমার করার’ জন্য দেশবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছে তারা।