নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের ক্রমাগত যুদ্ধ-হুমকির মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণরেখায় নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করল ভারত। সেনার নর্দার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রণবীর সিংহ নিয়ন্ত্রণরেখার সার্বিক নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেন। এর আগে, নিয়ন্ত্রণরেখা পরিদর্শন করে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে এসেছিলেন সেনাপ্রাধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত।
জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্র ৩৭০ ধারা বিলোপ করার পর থেকেই হুমকি দিয়ে আসছে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা বন্ধ করার পাশাপাশি, সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থেকে শুরু করে আকাশ সীমা ব্যবহার না করতে দেওয়া ও ট্রেন পরিষেবা স্থগিত রাখার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। এছাড়া, সংসদে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাস হওয়ার পর থেকেই যুদ্ধের হুমকি দিয়ে আসছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
সেনা গোয়েন্দা সূত্রে খবর, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণরেখার ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে এক ব্রিগেড বাহিনী মোতায়েন করেছে পাকিস্তান। প্রায় ২ হাজার জওয়ানকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বাগ ও কোটলি সেক্টরে মোতায়েন করেছে পাক সেনা। এর পাশাপাশি, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষবিরতি চুক্তিভঙ্গ করে গোলাগুলি বর্ষণের পরিমাণও তীব্র করেছে পাক বাহিনী।
জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে কিছুদিন ধরেই হুমকি দিচ্ছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ও সমর্থন চেয়ে বারবার বিভিন্ন বিশ্বমঞ্চকে ব্যবহার করে চলেছে পাকিস্তান। সেখানে ভারতের এই পদক্ষেপের সমালোচনার পাশাপাশি কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ।
কিন্তু, তাতে কোনও লাভ না হওয়ায় এখন যুদ্ধ-হুমকি দিতে শুরু করেছে পাক প্রশাসন। সম্প্রতি, পাক পার্লামেন্টে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের ইঙ্গিত দেন ইমরান। তিনি বলেন, পুলওয়ামার মত হামলা আবার হতে পারে। আমার পূর্বাভাস, হবেই। ওরা (ভারত) ফের আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাবে। ওরা আমাদের ওপর এয়ার-স্ট্রাইক চালাতে পারে। আমরা প্রত্যাঘাত করব। কে কি হবে তখন? কে জিতবে? কেউ না। তবে, ওই যুদ্ধের পরিণতি ভয়াবহ হবে।
গতকাল, একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একই কথা বলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে পরমাণু-যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ইমরান বলেন, পাকিস্তান কখনই যুদ্ধ শুরু করবে না। আমার স্পষ্ট কথা-- আমি শান্তিপ্রিয়, আমি যুদ্ধ-বিরোধী। আমার বিশ্বাস, যুদ্ধ কোনও সমস্যার সমাধান নয়। তবে, দুই পরমাণু-শক্তিধর রাষ্ট্র যদি যুদ্ধ শুরু করে, তাহলে তা প্রচলিত যুদ্ধ হিসেবে শুরু হলেও, অচিরেই পরমাণু-যুদ্ধে পরিণত হবে। যার পরিণতি অভাবনীয় হবে।
প্রত্যুত্তরে, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের যে কোনও প্রকার ‘মিস-অ্যাডভেঞ্চার’-এর যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত ভারত। বর্তমানে পূর্ব-এশিয়ার দুই দেশের সফরে গিয়েছেন রাজনাথ। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে রাজনাথ বলেন, ভারত কখনই আগ্রাসন দেখায়নি। ইতিহাস সাক্ষী আছে। ভবিষ্যতে করবে না। তবে, তার মানে এই নয় যে, নিজেদের ভূমি রক্ষা করতে ভারত শক্তি-ব্যবহার করা থেকে পিছিয়ে আসবে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিরুদ্ধে দু-মুখী কৌশল অবলম্বন করেছে পাকিস্তান। প্রথমত, উপত্যকাকে অশান্ত করার উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা ক্রমাগত চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কাশ্মীরকে অশান্ত দেখিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির রিপোর্ট অনুযায়ী, গত একমাসে ৪০-৫০ প্রশিক্ষিত জঙ্গি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। আরও ২০০ থেকে ২৫০ জঙ্গি ভারতে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। এর জন্য নিয়ন্ত্রণরেখার ঠিক ওপারে জয়েশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তৈবা সহ জঙ্গি-লঞ্চপ্যাডগুলি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতীয় সেনা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের যে কোনও দুরভিসন্ধিকে নিষ্ক্রিয় করতে তৈরি তারা।