কলকাতা: জল থই থই চারপাশ। মাঝে মধ্যে দ্বীপের মতো জেগে রয়েছে কিছু কুঁড়ে। অবশ্য ঘর নয়, বরং কাঠামো বলাই সঙ্গত। কারণ, চাল নেই। ভেঙে পড়েছে মাটির দেওয়াল। আর সেই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভুটভুটিতে চড়ে এগিয়ে চলেছেন কলকাতা থেকে সুন্দরবনে যাওয়া ১২ যুবক-যুবতী। তারকা ফুটবলার শিল্টন পাল, তাঁর স্ত্রী ও বন্ধুরা।
ঘূর্ণিঝড় উমপুন-বিধ্বস্ত সুন্দরবনের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে সশরীরে পৌঁছে গিয়েছিলেন দাপুটে গোলকিপার। বাদাবনের প্রায় ৫০০টি দুর্গত পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী, পোশাক দান করেছেন। এবিপি আনন্দকে মোবাইল ফোনে মোহনবাগানের তারকা বললেন, ‘দুদিন ধরে ত্রাণ বিলি করেছি আমরা। শুক্রবার নামখানা ব্লকের পাতিবুনিয়া ও রাজনগরে প্রায় ২৭০ পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছিলাম। শনিবার পাথরপ্রতিমা ব্লকের শ্রীদ্বানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের এল প্লট দ্বীপে প্রায় দেড়শো পরিবারকে সাহায্য করেছি।’
উমপুনের ধ্বংসলীলার ছাপ
ঘূর্ণিঝড় দুর্গতদের পোশাক, খাদ্যসামগ্রী অর্থাৎ পানীয় জল, চাল, ডাল, লবণ, চিড়ে, মুড়ি, বাতাসা, বিস্কিট ইত্যাদি দিয়েছেন সস্ত্রীক শিল্টন ও তাঁদের বন্ধুরা। তাঁদের এই মহৎ উদ্যোগে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শিল্টন বলছেন, ‘সকল বন্ধুবান্ধব, স্ত্রী সায়না মিলে টাকা তুলেছি। দেড়শো পরিবারকে সাহায্য করার মতো টাকা উঠেছিল শুরুতে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ৫০০ পরিবারকে সাহায্য করার। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক পরিবারের ৫-৬ জন করে থাকলে ২৫০০-৩০০০ মানুষের সাহায্য করা সম্ভব হবে বলে মনে হয়েছিল। আমরা চেনা-পরিচিত সকলের কাছে পাশে থাকার আবেদন জানাই। সাড়াও পাই। অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ অর্থসাহায্য করেছেন, কেউ আবার চাল-ডাল বা অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কিনে দিয়েছেন। আমার ভক্তরা তহবিল তৈরি করে দিয়েছেন। ফুটবল মাঠের সতীর্থরা এগিয়ে এসেছে। সেই দিয়েই মানুষের পাশে থাকছি। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ পরিবারের পাশেই থাকতে পেরেছি।’
মহৎ উদ্যোগে অনেককেই পাশে পেয়েছেন শিল্টন। যেমন এল প্লট দ্বীপে পঞ্চায়েত প্রধান প্রদ্যুৎ বর্মন। যিনি আবার মোহনবাগান ভক্তও। শিল্টনদের ত্রাণ বিলি করার যাবতীয় বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত মানুষের হাহাকার দেখে ব্যথিত শিল্টন। বলছিলেন, ‘অনেকেই আমাদের আসার খবর পেয়ে ছুটে আসছেন, ত্রাণ চাইছেন। মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। অনেক এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন। জলমগ্ন। উমপুনের পর দু সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। মৌসুনি দ্বীপ এখনও বিদ্যুৎহীন। বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। ইলেকট্রিক খুঁটি, গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভয়ানক ছবি দেখেছি।‘
ঘূর্ণিঝড়ের রাতে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ত্রাণশিবিরে। আর বাড়ি ফেরা হয়নি। কারণ দুর্যোগে বসতভিটে কার্যত নিশ্চিহ্ন। শিল্টন বলছেন, ‘চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়েছে। আগামী ২ বছর চাষবাস করতে পারবেন না কেউ। সেটাই ওঁদের মূল পেশা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে।’ যোগ করলেন, ‘প্রশাসন কাজ করছে। কলকাতা থেকে বহু মানুষ এসে সাহায্য করছেন, পাশে দাঁড়াচ্ছেন, সেটা ইতিবাচক। তবে গোসাবার মতো কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেখানে নদীর বাঁধ ভেঙেছে, সেখানে এখনও পৌঁছনো যাচ্ছে না।’
তবে শুধু ত্রাণ বিলি করেই থেমে থাকছেন না শিল্টন। তারকা গোলকিপার বলছেন, ‘সাতদিন পর স্বাস্থ্যশিবির করব সুন্দরবনে। ত্রিপল নিয়ে যাব। পরিশুদ্ধ পানীয় জল না পাওয়ায় ডায়েরিয়া, জ্বর হচ্ছে ওখানকার বাসিন্দাদের। জিওলিন পৌঁছে দিয়েছি। তবে বাজারে এখন জিওলিন পর্যাপ্ত নয়। আগামী সপ্তাহে চিকিৎসক, ওষুধ নিয়ে গিয়ে মেডিক্যাল ক্যাম্প করব।’
করোনার জন্য যথেষ্ট সতর্কতা নিয়েছিলেন শিল্টনরা। প্রত্যেকে মাস্ক, ফেস শিল্ড, গ্লাভস পরেছিলেন। ত্রাণের সঙ্গে মাস্কও বিলি করেছেন। যাঁরা ত্রাণ নিতে এসেছেন, তাঁদের আগে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা হয়েছে। ৩১ বছরের গোলকিপারের আবেদন, ‘উমপুনে কম-বেশি সকলেই বিধ্বস্ত। তবে আমাদের অন্তত অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সংকট হয়নি। সুন্দরবনে অনেকে থালা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদি কোথাও খাবার মেলে, সেই আশায়। এই দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। আমাদের উচিত ওঁদের পাশে দাঁড়ানোর। আমাদের মতো যাঁরা পরিচিত মুখ, তাঁরা এগিয়ে এলে অনেকেই উদ্যোগী হবেন। সাহায্য করবেন। তাতে সুন্দরবনের মানুষ খুব উপকৃত হবেন।’
উমপুন-বিধ্বস্ত সুন্দরবনে গিয়ে ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ বিলি করলেন শিল্টন, দুঃস্থদের জন্য করবেন স্বাস্থ্য শিবির
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
08 Jun 2020 06:32 PM (IST)
করোনার জন্য যথেষ্ট সতর্কতা নিয়েছিলেন শিল্টনরা। প্রত্যেকে মাস্ক, ফেস শিল্ড, গ্লাভস পরেছিলেন। ত্রাণের সঙ্গে মাস্কও বিলি করেছেন।
NEXT
PREV
আজ ফোকাস-এ (aaj-focus-e) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -