নয়াদিল্লি: ডি কে শিবকুমারকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেপাজতে পাঠাল দিল্লির আদালত। কর্নাটকের এই কংগ্রেস নেতাকে দলের যে কোনও বিপর্যয়, সঙ্কটের সময় মুশকিল আসান বলে দেখা হত। ১০দিন ধরে বেশ কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল রাতে বেআইনি আর্থিক লেনদেনে জড়িত অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে তদন্তকারী সংস্থাটি। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে দুজন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার হলেন। এর আগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমকে আইএনএক্স মিডিয়া কেলেঙ্কারি মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। কংগ্রেস, পরপর দুই দলীয় নেতার গ্রেফতারিতে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে। স্বয়ং রাহুল গাঁধী কেন্দ্রকে আক্রমণ করে ট্যুইট করেছেন, এটা সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির আরেকটি নমুনা!
আজ শিবকুমারকে বিশেষ আদালতের বিচারপতি অজয় কুমার কুহারের এজলাসে তোলা হয় রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে মেডিকেল চেকআপের পর। আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেডেরাল এজেন্সি ইডি শিবকুমারকে ১৪ দিন হেফাজতে রাখতে চেয়ে সওয়াল করে, তলব পেয়েই তিনি হাজিরা দিয়েছেন বটে, কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন, সহযোগিতা করেননি, তদন্তকে বিপথে চালানোর সচেতন চেষ্টাও চালিয়েছেন।
ইডি ২০১৮র সেপ্টেম্বর শিবকুমারের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে আয়কর দপ্তর তাঁর নামে এই অভিযোগ জানানোর পর যে, তিনি নিজের রাজনৈতিক সঙ্গী ভি মুলগুন্ডের মাধ্যমে এআইসিসি-কে ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। আয়কর ফাঁকি দিতে হাওয়ালা নেটওয়ার্ক চালানো, হিসাব বহির্ভূত টাকা পাচার, লেনদেন ও বাজারে খাটানোর জন্য দিল্লি, বেঙ্গালুরু জুড়ে নানা বাড়ি, লোকজনের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অভিযোগও তোলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৭-র আগস্টে দিল্লি ও কর্নাটক মিলিয়ে ৬৪টি জায়গায় তল্লাসি চালায় আয়কর দপ্তর, যার টার্গেট ছিলেন শিবকুমার। সেসময় গুজরাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যসভা আসনের নির্বাচনে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়েছিলেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল। পাছে বিজেপি কংগ্রেসি বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়ে পটেলকে নির্বাচনে হারিয়ে দেয়, সেজন্য ৪৪ জন কংগ্রেস এমএলএকে কর্নাটকের এক রিসর্টে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। এ ব্যাপারে মূল ভূমিকা ছিল শিবকুমারের। সে ব্যাপারেই ওই তল্লাসি চালিয়েছিল আয়কর।
শিবকুমারের গ্রেফতারি, জিজ্ঞাসবাদ নিয়ে কংগ্রেস তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আজ শিবকুমারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাননি দলের সাধারণ সম্পাদক কে কে বেনুগোপালের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস নেতারা। আর কর্নাটকের নানা জায়গায় বাসে ভাঙচুর করে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়, স্লোগান দেয় কংগ্রেস কর্মীরা। কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, অভিযুক্ত অপরাধের স্বীকারোক্তি দেননি বলে বলা যায়, তিনি সহযোগিতা করছেন না! ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কী হল? তিনি আরও বলেন, গত চারদিন ধরে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি তদন্তে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ইডি বলছে, তিনি সহযোগিতা করছেন না, সত্যি স্বীকার করছেন না। সত্যিটা কী এখানে? অভিযুক্তের কাছে যেটা সত্যি, সেটা না এজেন্সি যা সত্যি মনে করে, সেটা? এজেন্সি যা সত্যি মনে করে, সেটা ঠিক হলে এখানে প্রত্যেকে গ্রেফতার হবে।