আমদাবাদ: মায়ের মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে প্রায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিজেদের একটি ঘরে আটকে রেখেছিলেন তিন ভাই-বোন! চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা গুজরাতের রাজকোটের। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁদের উদ্ধার করেছে। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।


উদ্ধার হওয়া এই তিন ভাই-বোনের নাম অরমিশ, ভবেশ ও মেঘনা। তাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৪২ বছরের মধ্যে। তাঁদের বাবার দাবি, মায়ের মৃত্যু হওয়ার পর থেকেই এই অবস্থা হয়। ঘর থেকে বেরনো বন্ধ করে দেন তিন ভাই-বোন।

তাঁদের উদ্ধার করেছে ‘সাথী সেবা গ্রুপ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই সংস্থার কর্তা জল্পা পটেল জানিয়েছেন, ‘রবিবার সন্ধেবেলা ওই ঘরের দরজা ভেঙে তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। বাবার সাহায্যে তিন ভাই-বোনকে ঘর থেকে বের করা সম্ভব হয়। যে ঘরটিতে তাঁরা এতদিন ধরে আটকেছিলেন, সেই ঘরে সূর্যের আলো পৌঁছয় না। তাঁরা মল-মূত্র, বাসি-পচা খাবার এবং ছেঁড়া খবরের কাগজের মধ্যে পড়েছিলেন। তাঁদের অবস্থা শোচনীয়। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা চুল-দাড়ি কাটেননি। ভালভাবে না খাওয়ার ফলে তাঁদের ঠিকমতো দাঁড়ানোর ক্ষমতাও ছিল না। তাঁরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বলে দাবি করছেন বাবা। এই দাবি যদি সত্যিও হয়, তাহলেও তাঁদের অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।’

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারা আরও জানিয়েছেন, তাঁরা উদ্ধার করা তিন ভাই-বোনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন। তাঁরা ভালভাবে খাবার ও চিকিৎসা পেতে পারেন, এমন একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তাঁদের বাবা জানিয়েছেন, ‘আমি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। আমার তিন সন্তানই উচ্চশিক্ষিত। আমার বড় ছেলে অমরিশের বয়স ৪২ বছর। ওর বিএ, এলএলবি ডিগ্রি রয়েছে। মেয়ে মেঘনার বয়স ৩৯ বছর। ও মনোবিজ্ঞানে এমএ পাশ করেছে। ছোট ছেলে ভবেশ অর্থনীতিতে স্নাতক। ও ভাল ক্রিকেটও খেলত। কিন্তু মায়ের মৃত্যু তিনজনেরই জীবনে অন্ধকার ডেকে আনে। ১৯৮৬ থেকেই আমার স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। ১০ বছর আগে তাঁর মৃত্যু হয়। আমার সন্তানদের উপর মায়ের মৃত্যুর গভীর প্রভাব পড়ে। এরপরেই ওরা একটি ঘরে নিজেদের বন্দি করে ফেলে। আমি রোজ বাইরে থেকে ওদের খাবার দিতাম। ওরা কোনওদিন ঘর থেকে বেরোত না। অনেকে বলে, আমাদের আত্মীয়রা ওদের উপর কালো জাদু করেছে। তার ফলেই এই অবস্থা হয়েছে।’