নয়াদিল্লি: ভারতীয় অর্থনীতি হয়তো ঝিমিয়ে পড়েছে, কিন্তু তার সামনে মন্দার বিপদ নেই। রাজ্যসভায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন নির্মলা সীতারামন।
বুধবার রাজ্যসভায় দেশের অর্থনীতির হাল নিয়ে আলোচনার জবাবে ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কংগ্রেস-ইউপিএ ২ আমলের সঙ্গে ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রথম বিজেপি-এনডিএ সরকারের তুলনা টানেন তিনি। দুই আমলের তথ্য, পরিসংখ্যান পেশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি, মোদী সরকারের শাসনে মুদ্রাস্ফীতি কমেছে, বৃদ্ধি চাঙ্গা হয়েছে।
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, মোদী সরকার অর্থনীতির ‘বেহাল’ দশা ফেরাতে কিছুই করছে না। অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়েছে, লোকের হাতে নগদের অভাব থাকায় কেনাকাটা হচ্ছে না। কিন্তু নির্মলা আগের জমানার সঙ্গে বর্তমান সরকারের পারফরম্যান্সের খতিয়ান পেশ করে বলেন, ২০০৯-২০১৪ পর্বে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল ১৮৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরের ৫ বছরে বিজেপি আমলে তা হয়েছে ২৮৩.৯ মার্কিন ডলার। বিদেশি বিনিময় মুদ্রা তহবিল দ্বিতীয় ইউপিএ আমলের ৩০৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বিজেপি আমলে বেড়ে হয়েছে ৪১২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তারপরই তিনি বলেন, আর্থিক বৃদ্ধির গতি হয়তো কিছুটা ধীর হয়েছে, কিন্তু কোনও মন্দা নই। মন্দার আশঙ্কাই নেই।
কংগ্রেসের আনন্দ তেওয়ারি বিজেপি সরকারের বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ তুললে পাল্টা বক্তব্য পেশ করেন নির্মলা। বিজেপির সাংসদ অশ্বিনী যাদবও দাবি করেন, দেশের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়া কাঠামোগত নয়, এর চরিত্র আকস্মিক এবং ২০২০-র মার্চ নাগাদ এর অবসানও হবে।
সরকারের আর্থিক নীতির পক্ষে সওয়াল করে নির্মলা বলেন, অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে নেওয়া ৩২টি পদক্ষেপের ফল পাওয়া যাচ্ছে। শেষ গত দুটি অর্থবর্ষে ব্যাঙ্কগুলির ব্যালান্স শিট সঙ্কটের বিলম্বিত ফলস্বরূপ জিডিপি বৃদ্ধি মার খেয়েছে বলে দাবি করেন নির্মলা।
দেশে নগদ অর্থের অভাব রয়েছে, এই ধারণা খারিজ করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা। এছাড়া ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড চালু হওয়ার পর সুফল মিলছে, ৭০ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান পেয়েছে ব্যাঙ্কগুলি, নগদের পরিমাণ বেড়েছে। নির্মলার বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে কংগ্রেস, অন্য বিরোধীরা ওয়াকআউট করে।

এদিকে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ট্যুইটে সরকারের কাছে দেশের অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছেন। ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চের তথ্য উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই সংস্থা চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.৭ শতাংশে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইয়েচুরির বক্তব্য, দেশে বৃদ্ধির হার এই নিয়ে টানা তিনটি ত্রৈমাসিকে কমল। এটা যদি মন্দা না হয়, তাহলে কী? সরকারের ভারতীয় অর্থনীতির হাল নিয়ে শ্বেতপত্র বের করা উচিত। জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্বে, টানা ৬টি ত্রৈমাসিকে ভারতীয় অর্থনীতির গতি কমে ৪.৭ শতাংশ হতে পারে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে ফিচ গোষ্ঠীর ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ। এই প্রেক্ষাপটে ইয়েচুরি বলেছেন, ধনীদের খুশি করা, কর্পোরেটদের কর ছাড় বন্ধ করুন। তার বদলে এই অর্থ ব্যবহার করুন সরকারি বিনিয়োগের পিছনে যাতে কর্মসংস্থান হয়, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, আমাদের বহুল প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণ হয়।